ওয়াশিংটন: ভেনেজুয়েলার সমুদ্রসীমায় মার্কিন সেনাবাহিনী আবারও নেশা তস্করিদের উপর বড়সড় অভিযান চালাল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ড্রাগস বহনকারী একটি ছোট নৌকাকে ধ্বংস করা হয়েছে, যেখানে অন্তত ছয়জন নেশা-তস্কর নিহত হয়েছে।
ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ লেখেন— “আমাদের সেনারা আরও একবার নেশা-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছে। এই অভিযানে মার্কিন বাহিনীর কোনও ক্ষতি হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের ‘ড্রাগস যুদ্ধ’
ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই ক্যারিবিয়ান সাগরে নেশা-তস্করদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযান শুরু করেছে। সাম্প্রতিক ঘটনাটি ছিল গত কয়েক মাসের মধ্যে পঞ্চম বড়সড় পদক্ষেপ।
আমেরিকা বহুদিন ধরেই ভেনেজুয়েলার সমুদ্রপথকে মাদক পাচারের অন্যতম প্রধান রুট হিসেবে চিহ্নিত করে এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন সেনার সরাসরি অভিযান কূটনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মার্কিন রাজনীতিতে বিতর্ক
এই ঘটনার পরেই আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। কিছু রিপাবলিকান সাংসদ হোয়াইট হাউসের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন, এই ধরনের সামরিক অভিযানের আইনগত বৈধতা কতটা। তাঁদের মতে, কংগ্রেসকে না জানিয়ে বা অনুমোদন না নিয়ে আন্তর্জাতিক সীমানায় অভিযান চালানো সংবিধান-বিরোধী।
অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাট নেতারা সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করছে। তাঁদের বক্তব্য, “কোনও দেশের অনুমতি ছাড়া তার সমুদ্রসীমায় ঢুকে গুলি চালানো জাতিসংঘ চার্টারের পরিপন্থী।”
বিরোধীদের সমালোচনা
ডেমোক্র্যাট শিবিরের এক নেতার মন্তব্য, “ড্রাগস তস্করদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অবশ্যই জরুরি। কিন্তু তা আইন ও আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে হওয়া উচিত। ট্রাম্প নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে সেনাদের ব্যবহার করছেন।”
ট্রাম্পের পাল্টা জবাব
সমালোচনার জবাবে ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়েছেন, “আমেরিকার নাগরিকদের নিরাপত্তা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। ড্রাগস-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ চলবে। যারা আমাদের দেশে নেশার বিষ ঢোকাচ্ছে, তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ভেনেজুয়েলা এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, তারা শিগগিরই আমেরিকার বিরুদ্ধে সামুদ্রিক সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলবে। এর আগে লাতিন আমেরিকার একাধিক দেশ মার্কিন “ড্রাগস ওয়ার” নীতির বিরোধিতা করেছে। তাঁদের দাবি, এ ধরনের সামরিক পদক্ষেপে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হয় এবং অনেক সময় নিরীহ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হন।
মার্কিন নৌবাহিনীর সাম্প্রতিক এই অভিযান শুধু নেশা-তস্করদের বিরুদ্ধে লড়াই নয়, বরং মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও এক নতুন দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। ট্রাম্প সমর্থকরা এটিকে শক্ত পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিচ্ছেন, আর বিরোধীরা বলছেন—এটি আইন ভঙ্গের সামিল। পরবর্তী দিনে এই ইস্যু আমেরিকার বিদেশনীতি ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আরও বড় প্রভাব ফেলবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।