ওয়াশিংটন: আমেরিকায় চলতে থাকা সরকারি শাটডাউনের কারণে বিমান ভ্রমণে অভূতপূর্ব বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয় দিনে শনিবার (৮ নভেম্বর) দেশজুড়ে ১০০০-এর বেশি ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় লক্ষাধিক যাত্রী আটকে পড়েছে। এই শাটডাউন, যা ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে এখন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়ে উঠেছে, শুধু দেশীয় অর্থনীতিকেই নয়, আন্তর্জাতিক ভ্রমণকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করছে।
ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এর নির্দেশে ৪০টি প্রধান বিমানবন্দরে ফ্লাইট কাটতে হচ্ছে, যার ফলে শুধুমাত্র শনিবার ১৪৬০টি ফ্লাইট বাতিলের খবর পাওয়া গেছে। এই সংকটের ছায়া পড়েছে কানাডা, ইউরোপ এবং এশিয়ার দেশগুলোতেও, যেখানে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের আন্তর্জাতিক রুটগুলোতে বিলম্ব এবং বাতিলের ঘটনা বাড়ছে।
লাদাখের ক্ষোভে কার্গিলির বিস্ফোরণ! কাঠগড়ায় বিজেপি
শাটডাউনের মূলে রয়েছে কংগ্রেসের রাজনৈতিক গতিবিধি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন এবং ডেমোক্র্যাটরা বাজেট নিয়ে একমত হতে পারছে না, ফলে ফেডারেল কর্মচারীরা বিশেষ করে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা মাসের পর মাস বেতন ছাড়াই কাজ করছে। এফএএ-এর তথ্য অনুসারে, এই কর্মচারীদের অনুপস্থিতি এবং ক্লান্তির কারণে বিমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চাপের মুখে পড়েছে।
ফলে, পরিবহণ মন্ত্রী শন ডাফি এর নির্দেশে ৪০টি ‘হাই-ইমপ্যাক্ট’ বিমানবন্দরে যেমন নিউইয়র্কের জেএফকেআর, চিকাগোর ও’হেয়ার, হিউস্টনের জর্জ বুশ ইন্টারকন্টিনেন্টাল এবং অ্যাটলান্টার হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন প্রথমে ৪ শতাংশ এবং এখন ১০ শতাংশ পর্যন্ত ফ্লাইট কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) প্রায় ৭৮০ থেকে ১০০০টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছিল, আর শনিবার সংখ্যাটি আরও বেড়ে ১৪৬০-এ পৌঁছে গেছে।
ফ্লাইট অ্যাওয়্যারের তথ্যমতে, এর মধ্যে অনেকগুলো বাতিল শাটডাউন-সম্পর্কিত, যদিও কিছু আবহাওয়া বা অন্যান্য কারণেও হয়েছে।এই বিশৃঙ্খলার শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। নিউইয়র্কের লাগার্ডিয়া বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ যাত্রী ব্রায়ান ডিক, একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, বলেন, “আমি ফিনিক্সে ফিরছিলাম, কিন্তু ফ্লাইট বাতিল হয়ে গেল। কনফারেন্স শেষ করে তাড়াতাড়ি ফিরতে চেয়েছিলাম, এখন হোটেল আর খাবারের খরচ বাড়ছে।”
মিশিগানের কেলি ম্যাথিউজের মতো ব্যবসায়ী যাত্রীরা তাদের আসন্ন ভ্রমণগুলো বাতিল করছেন, কারণ বেতন না পাওয়া কর্মচারীদের মতো তারাও অর্থনৈতিক চাপে রয়েছেন। চার্লট, নর্থ ক্যারোলাইনায় সবচেয়ে বেশি ১২০টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, যা ছোট বিমানবন্দরগুলোতে আরও তীব্র প্রভাব ফেলছে। এয়ারলাইন্সগুলো যেহেতু হাব-টু-হাব রুটের পরিবর্তে আঞ্চলিক ফ্লাইট কাটছে, তাই গ্রামীণ এলাকার যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
আমেরিকান এয়ারলাইন্স এবং ডেল্টা-এর মতো কোম্পানিগুলো যাত্রীদের ফুল রিফান্ড দিচ্ছে, কিন্তু হোটেল বা খাবারের খরচ কভার করছে না, যদি না তা এয়ারলাইন্সের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। ফলে, টুরো-এর মতো কার শেয়ারিং সার্ভিসের বুকিং ৩০ শতাংশ বেড়েছে, যাত্রীরা বিকল্প খুঁজছেন।এই সংকটের প্রভাব শুধু আমেরিকায় সীমাবদ্ধ নয়, অন্য দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো এফএএ-এর কাটের আওতায় নেই, কিন্তু আমেরিকান এয়ারলাইন্সের রুটগুলোতে চেইন রিয়্যাকশন ঘটছে।
ডোমিনিকান রিপাবলিকে পরিবারের কাছে যাওয়ার পথে মিয়ামি বিমানবন্দর থেকে যাত্রিণী এমি হলগুইন বলেন, “আমার ফ্লাইট দেরি হয়েছে, কারণ আমেরিকান সাইড থেকে কানেকটিং ফ্লাইট নেই। এটা শুধু আমাদের নয়, সবার জীবনকে প্রভাবিত করছে।” ইউরোপে লন্ডন হিথ্রো এবং প্যারিস চার্লস ডি গল বিমানবন্দরে আমেরিকান ফ্লাইটের বাতিলের খবর এসেছে, যা ইউরোপীয় যাত্রীদেরও আটকে দিচ্ছে। কানাডার টরন্টোতে ইউএস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট কমে যাওয়ায় ব্যবসায়িক মিটিংগুলো বাতিল হচ্ছে।
এশিয়ায় টোকিও এবং সিঙ্গাপুরের মতো হাবগুলোতে প্রভাব পড়ছে, যেখানে কর্গো ফ্লাইট কমে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শাটডাউন যদি থ্যাঙ্কসগিভিং-এর আগে না শেষ হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক ট্যুরিজম এবং ট্রেডে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হতে পারে।
