কাবুল: আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে ফের কেঁপে উঠল মাটি। শুক্রবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দু’টি ভূমিকম্প আঘাত হানে কাবুল-সহ (Kabul earthquakes) পার্শ্ববর্তী এলাকায়। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি (NCS) জানিয়েছে, প্রথম ভূকম্পনটি হয় দুপুরে এবং দ্বিতীয়টি রাতের দিকে। রিখটার স্কেলে দুটির মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৪.৩ ও ৪.১, যা মধ্য-মাত্রার ভূমিকম্প হিসেবে ধরা হলেও গভীরতা বেশ বেশি হওয়ায় বিস্তৃত এলাকায় অনুধাবনযোগ্য ছিল।
NCS-এর তথ্য অনুযায়ী, দুপুর ১২টা ৫৯ মিনিটে প্রথম ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। এর মাত্রা ছিল ৪.৩ এবং উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ১৭০ কিলোমিটার। একই দিনে রাত ৯টা ৩৩ মিনিটে দ্বিতীয় ভূকম্পনটি হয়, যার মাত্রা ৪.১, গভীরতা ১৭৮ কিলোমিটার। দুই ক্ষেত্রেই উপকেন্দ্র ছিল আফগানিস্তানের উত্তর দিকের হিন্দুকুশ পর্বতমালার সক্রিয় সিসমিক অঞ্চলে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম্পনের গভীরতা যেহেতু খুব বেশি, তাই মাটির উপরে তেমন প্রচণ্ড ধাক্কা অনুভূত না হলেও ভূগর্ভস্থ টেকটনিক চাপের ইঙ্গিত বেশ স্পষ্ট। হিন্দুকুশ এলাকা বহু দশক ধরে পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত, কারণ এখানেই ইন্ডিয়ান প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষ ক্রমাগত চলছে।
এই ঘটনার ঠিক আগেই, ৪ নভেম্বর আফগানিস্তানের উত্তরাংশে আরও শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প আঘাত করেছিল। রিখটার স্কেলে তার মাত্রা ছিল ৬.৩, এবং shallow-depth হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল বিশাল। তালিবান সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ২৭ জন মারা যান এবং ৯৫৬ জন আহত হন। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে বহু ঘরবাড়ি, বাজার এলাকা এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার মধ্যে একটি বিখ্যাত মসজিদও রয়েছে।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস এবং UNOCHA বহুদিন ধরেই সতর্ক করে আসছে যে, আফগানিস্তান ভূগোলগতভাবে অত্যন্ত ভঙ্গুর। দেশটির বিভিন্ন প্রদেশ জুড়ে সক্রিয় ফল্ট লাইন চলে গেছে। ফলে এখানে ভূমিকম্প ছাড়াও বন্যা, ভূমিধস এবং খরা সবই প্রায় প্রতি বছরই দেখা দেয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বছরের পর বছর যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা। অনেক পরিবার এখনো কাঁচা ঘরে বা অরক্ষিত ভবনে বসবাস করেন, যা মাঝারি ভূমিকম্পও তাদের জন্য বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সাম্প্রতিক দুইটি ভূমিকম্পে এখনো পর্যন্ত প্রাণহানি বা বড় ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভূকম্পবিদরা সতর্ক বার্তা দিচ্ছেন এ ধরনের গভীর ভূমিকম্প কখনো কখনো বৃহৎ মাত্রার কম্পনের পূর্বাভাস হতে পারে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ চাপ কয়েক বছর ধরে বাড়ছে বলে পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে।
কাবুল এবং মাজার-ই-শরিফ অঞ্চলের বাসিন্দাদের অনেকেই রাতের ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। যদিও স্বাভাবিক জনজীবনে বড় বিঘ্ন ঘটেনি, তবুও পূর্ববর্তী ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতি অনেকের মনকে অস্থির করে তুলেছে। স্থানীয় প্রশাসন জরুরি পরিষেবাগুলো প্রস্তুত রেখেছে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
