৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Trump) ঘোষিত ২৫ শতাংশ “রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ” বা পাল্টা আমদানি শুল্ক। গত সপ্তাহে এই ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প, এবং এই নিয়ে Truth Social-এ পোস্ট করে তিনি জানিয়েছেন, “বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার এখন আমেরিকার কোষাগারে ঢুকছে!”
এই শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে লাভ তুলেছে অথচ মার্কিন পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক ধার্য করেছে, তাদের প্রতি এবার কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে। ট্রাম্প প্রায় ৭০টি দেশের বিরুদ্ধে এই শুল্ক নীতির ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এখন থেকেই কার্যকর হয়েছে এবং ২৭ আগস্ট থেকে এই শুল্কের পরিমাণ বেড়ে হবে ৫০ শতাংশ।
কেন এই শুল্ক?
ট্রাম্প বলেছেন, “ভারতের শুল্কনীতি অনেক বেশি। তাদের কাছে মার্কিন পণ্য রফতানি করতে গেলে নানা বাধা তৈরি হয়। কিন্তু তারা সহজেই আমাদের বাজারে প্রবেশ করতে পারে। এই অসমতা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, ভারত রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে শক্তি ও সামরিক সরঞ্জাম কিনছে, যা মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থী। এই কারণেও ভারতকে অতিরিক্ত শাস্তিমূলক শুল্কের আওতায় আনা হয়েছে।
ভারতের উপর কী প্রভাব পড়তে পারে?
এই শুল্ক আরোপের ফলে ভারতের বহু রফতানি শিল্প ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। বিশেষত টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, গহনা, এবং ওষুধ শিল্পে সরাসরি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির বড় অংশই এই খাতে, এবং অতিরিক্ত শুল্কের ফলে ক্রেতারা বিকল্প খুঁজে নিতে পারেন।
ভারত সরকার এখনো এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে বাণিজ্য মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। প্রয়োজনে WTO-তে অভিযোগ জানানো হবে।”
ট্রাম্প এই পদক্ষেপকে শুধুই অর্থনৈতিক বলে ব্যাখ্যা করেননি, বরং এটিকে রাজনৈতিকভাবে ‘আমেরিকার পুনর্জাগরণ’ হিসেবে উপস্থাপন করছেন। Truth Social-এ তিনি লিখেছেন, “আমেরিকার মহত্ব কেবল র্যাডিকাল বাম আদালতই নষ্ট করতে পারে, যারা চায় দেশ ব্যর্থ হোক।” এই বক্তব্য স্পষ্ট করে দেয় যে ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারে জাতীয়তাবাদী অর্থনীতি ও “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতিকে ফের জোরদার করতে চাইছেন।
আগামী দিনে কী হতে পারে?
যেহেতু ২৭ আগস্ট থেকে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক যুক্ত হবে, তার আগে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক আলোচনা শুরু হতে পারে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এই একতরফা পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কে এক নতুন উত্তেজনার সূচনা করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, “এই শুল্ক যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে রাজনৈতিক ভাবে ট্রাম্প হয়তো ঘরোয়া সমর্থন জোগাড় করতে পারবেন।”