ওয়াশিংটন: রুশ তেল আমদানির কারণে ভারতের উপরে অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্তকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ রক্ষার পদক্ষেপ বলে সমর্থন করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সামনে নাভারো ভারতকে আখ্যা দিলেন “মহারাজা অব ট্যারিফস” বা ‘শুল্কের মহারাজা’।
নাভারোর অভিযোগ, ভারত ও চীন রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে মস্কোর যুদ্ধযন্ত্রকে অর্থ সাহায্য করছে। “ভারত আমাদের কাছে পণ্য বিক্রি করে বিপুল অর্থ আয় করছে, কিন্তু আমরা তাদের কাছে কিছুই বিক্রি করতে পারি না। সেই অর্থ দিয়েই তারা রুশ তেল কিনছে, আর রাশিয়া সেই টাকা ব্যবহার করছে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে। এরপর আমেরিকান করদাতাদের টাকা দিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করতে হচ্ছে। এই সমীকরণ মেলে না,” মন্তব্য করেন নাভারো।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় আমদানির উপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করেছিল, যা ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়। বুধবার আরও একটি নির্বাহী আদেশে ভারতীয় পণ্যের উপর রুশ তেল বাণিজ্যের কারণে আরও ২৫% শুল্ক চাপানো হয়েছে। ফলে মোট শুল্ক দাঁড়াল ৫০%, যা আমেরিকার পক্ষ থেকে কোনও দেশের উপর চাপানো অন্যতম সর্বোচ্চ শুল্ক।
নাভারো বলেন, “এটি সম্পূর্ণ জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন। রুশ তেল কেনা বন্ধ করতে ভারতের স্পষ্ট অস্বীকৃতি সরাসরি রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রকে শক্তি জোগাচ্ছে।”
চীনের বিরুদ্ধে একই ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, “চীনের উপর ইতিমধ্যেই ৫০ শতাংশের বেশি শুল্ক আছে। নিজেদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাই না। প্রেসিডেন্ট বলেছেন— দেখা যাক কী হয়।”
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি উপদেষ্টা স্টিফেন মিলারও দাবি করেছেন, রুশ তেল কেনার ফলে মস্কোর সামরিক তহবিলে বড়সড় যোগান দিচ্ছে ভারত, অথচ বিকল্প বাজার সহজেই পাওয়া সম্ভব।
অন্যদিকে, নয়া দিল্লি এই মার্কিন সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, এই পদক্ষেপ “অন্যায্য, অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য”। ভারতের রুশ তেল আমদানি সম্পূর্ণভাবে বাজারভিত্তিক এবং দেশের ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে করা হয় বলেই জানায় সরকার।
বিদেশ মন্ত্রক জানায়, “আমরা আগেই স্পষ্ট করেছি— আমাদের জ্বালানি আমদানির সিদ্ধান্ত বাজারের পরিস্থিতি ও জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে নেওয়া হয়। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে যা প্রয়োজন, আমরা তাই করব।”
এ নিয়ে তিন দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার আমেরিকার প্রতি এমন কড়া প্রতিক্রিয়া জানাল ভারত।