ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর: বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে সংখ্যালঘু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর মৌলবাদীদের নৃশংস নির্যাতন অব্যাহত (Communal Clash)। খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলায় ইসলামপন্থীদের হাতে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন বৌদ্ধ সংখ্যালঘুরা। সাম্প্রতিক ঘটনায় এই উপজেলার কয়েকজন বৌদ্ধকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, আর কয়েকজন গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
এই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা (কমিউনাল টেনশন) চট্টগ্রাম পার্বত্য চট্টগ্রামের (সিএইটি) অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে চাকমা, মারমা এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রত্যেকদিন অত্যাচারিত হচ্ছে । এই ঘটনায় ত্রিপুরার রাজা প্রদ্যুৎ বিক্রম মানিক্য দেববর্মা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছেন বলেছেন, “যখন আমরা বিভিন্ন দলের নামে রাজনৈতিকভাবে একে অপরের সঙ্গে লড়াই করছি, তখন ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী র্যাডিক্যাল ফান্ডামেন্টালিস্টদের জমি দখল করতে সাহায্য করে খাগড়াছড়ির এলাকায় ৪ জন আদিবাসীকে হত্যা করেছে।
এই ছবিগুলি আমাদের সকলকে সতর্ক করার মতো, ত্রিপুরা, মণিপুরি বা বাঙালি সম্প্রদায় যাই হোক না কেন, ত্রিপুরার সীমান্তের কয়েক মাইল ওপারে কী বিপদ লুকিয়ে আছে।” সেপ্টেম্বর মাসে খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটি জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা তীব্রতর হয়েছে। ১৮-২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাঙালি সেটলাররা চাকমা এবং অন্যান্য আদিবাসীদের বাড়ি, দোকান এবং বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা চালিয়েছে।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা এবং সদরে অন্তত ৪ জন আদিবাসী নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে চাকমা সম্প্রদায়ের সদস্যরা বেশি। বাংলাদেশ বৌদ্ধ হিন্দু খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তথ্য অনুসারে, এই হামলায় শতাধিক লোক আহত হয়েছে এবং বৌদ্ধ মন্দিরে ভাঙচুর, মূর্তি ভাঙা এবং দানপাত্র লুট হয়েছে। একজন বাঙালি সেটলার মামুনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নামে শুরু হওয়া এই হিংসা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে।
আদিবাসীরা বলছেন, সেনাবাহিনী মৌলবাদীদের দখলদারিত্বে সহায়তা করেছে সেই কারণে সংখ্যালঘুরা আরও বেশি অসহায় বোধ করছে। ত্রিপুরা রাজা প্রদ্যুৎ বিক্রম মানিক্য দেববর্মা, যিনি টিপ্রা মোথা পার্টির চেয়ারম্যানও বটে, তাঁর এই সতর্কবাণী ত্রিপুরার আদিবাসীদের মধ্যে নতুন উদ্বেগ জাগিয়েছে। তিনি বলেছেন, এই ঘটনাগুলি ত্রিপুরা, মণিপুরি বা বাঙালি সকল সম্প্রদায়ের জন্য সতর্কতার সংকেত।
সীমান্তের কাছাকাছি এমন হিংসা ত্রিপুরায় অভিবাসন এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াতে পারে। প্রদ্যুৎ মানিক্যের এই বক্তব্য ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে, যেখানে তিনি আদিবাসী অধিকারের জন্য লড়াই করে আসছেন। তিনি আরও বলেছেন, “আমরা রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত হয়ে থাকলে, সীমান্তের ওপারের এই বিপদ আমাদের সকলকে গ্রাস করবে।”
দেবীর বোধনেই বিসর্জন পাকিস্তান, ইতিহাস গড়ল ভারত
যদিও এই ঘটনায় ভারত সরকার নীরব।তবে ত্রিপুরা সরকার আদিবাসী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছে। রাষ্ট্রসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলি বাংলাদেশকে সংখ্যালঘু সুরক্ষার জন্য চাপ দিচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা করলেও, আদিবাসী সুরক্ষার জন্য কোনো কড়া পদক্ষেপ নেয়নি। আদিবাসী নেতারা বলছেন, “আমরা আমাদের জমি এবং ধর্মীয় স্থান রক্ষা করতে চাই। সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।”