Iran: হিজাব খুলতে মরিয়া ইরানি নারীরা, সরকার বলছে জেলে পাঠাব

ইরানের (Iran) সংসদ দেশটির বাধ্যতামূলক হিজাব আইন কঠোর করতে নতুন একটি বির্তকিত বিল পাশ করেছে। প্রস্তাবিত এই আইনে যথাযথভাব পোশাক না পড়ার দায়ে একজন নারীর…

Female spectators returned to Iran football fields

ইরানের (Iran) সংসদ দেশটির বাধ্যতামূলক হিজাব আইন কঠোর করতে নতুন একটি বির্তকিত বিল পাশ করেছে। প্রস্তাবিত এই আইনে যথাযথভাব পোশাক না পড়ার দায়ে একজন নারীর ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ইরানের বর্তমান আইন অনুযায়ী, নারীদের চুল হিজাব দিয়ে ঢেকে রাখার পাশাপাশি লম্বা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা বাধ্যতামচলক করেছে।‌ আইন না মানা হলে ১০ দিন থেকে ২ মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার থেকে ৫ লাখ জরিমানার বিধান রয়েছে। নতুন বিলের এই সাজা বাড়িয়ে পাঁচ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, ১৮ কোটি থেকে ৩৬ কোটি রিয়াল জরিমানা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, সংগঠিত ভাবে বা বিদেশি মিডিয়ার সহযোগিতায় ‘হিজাব আইন বিরোধী প্রচারণা চালালে ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নগ্নতার প্রচার ও হিজাব তাচ্ছিল্য করার দায়ে জরিমানার প্রস্তাব রাখা হয়েছে এই বিলে।

নতুন প্রস্তাবিত এই বিল ইরানের মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এক নাগরিকের বক্তব্য, এই বিল পাস করার আগে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হয়নি। কোনো আইন তৈরির আগে জনগণের ভোট নেওয়া খুব স্বাভাবিক একটি প্রথা। একটি গণভোট করলেই বোঝা যাবে এই প্রস্তাবনায় মানুষের সমর্থন আছে কিনা। অন্য এক নাগরিকের মতে, আমি এই আইন সমর্থন করি। হিজাব পরার স্বাধীনতা থাকবে নাকি থাকবে না, তার সমাজের রীতি অনুযায়ী নির্ধারিত হওয়া উচিত।‌

ইরানের নারীদের মধ্যে গত এক বছরে হিজাব আইন না মানার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে। এর শুরুটা হয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে মাসা আমিনি‌র মৃত্যুর পর। সঠিক ভাবে হিজাব না পরার দায়ে ইরানের পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার তিনদিন পর গত সেপ্টেম্বরে মারা যান মাসা আমিন। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে, সেসময় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তীব্র বিক্ষোভ করেছিল। সেসময় ইরানের বিভিন্ন এলাকায় হিজাবে পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেন হাজারো নারী। ইরানের প্রশাসন কঠোর ভাবে সেই বিক্ষোভ দমন করেছিল। ওই মাসে ইরানের নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে ৫০০ জন মারা যায়। বিক্ষোভে সামিল হওয়ার অপরাধে ২০০০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ চাপে পড়ে টহল বন্ধ করে দেয়। আবার, এবছরের জুলাই থেকে আবার টহল দেওয়া শুরু হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে, ইরানের নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনী মন্তব্য করেন এই বিক্ষোভ আমেরিকা, ইজরায়েলের মতো দেশের মদতে করা হয়েছে।‌কারণ আমাদের দেশের ক্রমাগত উন্নতি তারা সহ্য করতে পারছেন না। ইরানের নিরাপত্তারক্ষীরাও মনে করেন, পশ্চিমের দেশের উস্কানিতেই হিজাব আইনের বিরুদ্ধে তাদের দেশে‌ বিক্ষোভ চলছে।‌ ইরানের প্রশাসক গত চার বছর ধরে জোর করে নারীদের হিজাব আইন মানতে বাধ্য করছে। আইন না মানায় গ্রেফতার, হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে অনেককেই।‌ ইরানের নাগরিকদের বড়ো একটা অংশ ইরানের প্রশাসনের কট্টর মনোভাব পোষণ করেন। ইরানের অতি কঠোরতার কারণে অনেক নারী ও পুরুষ ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছে। ইরানের হিজাবের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন হয় ১৯৭৯ সালের মার্চে, যখন ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনী নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে। সেসময়ও বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন ও হামলা চালিয়ে বিক্ষোভ দমন করে ইরান প্রশাসন।