নিউ ইয়র্ক, ৩ নভেম্বরঃ নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনের দৌড়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনীতিবিদ জোহরান মামদানি এখন আলোচনার কেন্দ্রে। আর তাঁকে নিয়েই নিজের সমর্থন জানিয়েছেন বহুল আলোচিত বাঙালি লেখক ও মানবাধিকারকর্মী তসলিমা নাসরিন।
তসলিমা তাঁর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে লিখেছেন—
“আমি আমেরিকার নাগরিক নই। আমার ভোট দেওয়ার অধিকার নেই। আমি শুধু এক বাউন্ডুলে পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট…
জোহরান মামদানিকে নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে দেখতে চাইছি। তাঁর মা মীরা নায়ার, অসাধারণ ফিল্ম ডিরেক্টর, তাঁর বাবা হার্ভার্ড স্কলার, কলোম্বিয়া প্রফেসর…
এমন শিক্ষিত, স্মার্ট, সেক্যুলার, ডেডিকেটেড, অসাম্প্রদায়িক, লিবারেল প্রার্থী কবে আর পাওয়া যাবে!”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে লেখিকা জানিয়েছেন— তিনি ভোটাধিকার না থাকলেও এমন একজন শিক্ষিত, সেক্যুলার ও উদার মানসিকতার প্রার্থীকে নিউ ইয়র্কের মেয়র হিসেবে দেখতে চান, যিনি ধর্ম বা বংশ নয়, বরং মানবিকতা ও যুক্তির ভিত্তিতে রাজনীতি করেন।
🌍 কেন করলেন এই মন্তব্য?
১. বদলে যাওয়া রাজনৈতিক দৃশ্যপট:
তসলিমার মতে, নিউ ইয়র্কের মতো বহুজাতিক শহরে এখন পরিবর্তনের সময় এসেছে। যেখানে ঐতিহ্যবাহী রাজনীতিবিদদের জায়গা নিচ্ছে নতুন প্রজন্মের প্রগতিশীল প্রার্থীরা। জোহরান মামদানি সেই পরিবর্তনের প্রতীক।
২. শিক্ষিত ও সেক্যুলার পটভূমি:
জোহরানের মা মীরা নায়ার, একজন বিশ্ববিখ্যাত পরিচালক (Monsoon Wedding, The Namesake), আর তাঁর বাবা মাহমুদ মামদানি, একজন হার্ভার্ড-প্রশিক্ষিত ইতিহাসবিদ ও অধ্যাপক।
এই পরিবারিক পটভূমিই তসলিমার কাছে তাঁকে এক “লিবারেল ও অসাম্প্রদায়িক নেতা” হিসেবে তুলে ধরেছে।
৩. ব্যক্তিগত অনুভূতি ও ভোটাধিকারের অভাব:
তসলিমা নিজেই মার্কিন নাগরিক নন, তাই ভোট দিতে পারেন না। তবু তাঁর পোস্টে দেখা যায়— তিনি নিজেকে শুধু “একজন অতিথি” মনে করলেও, সমাজের দিকনির্দেশে তাঁর আগ্রহ ও উদ্বেগ প্রবল।
🗽 রাজনৈতিক ও সামাজিক তাৎপর্য
এই ঘটনাকে অনেকে একটি বৃহত্তর সামাজিক বার্তা হিসেবে দেখছেন—
একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম প্রার্থী যখন আমেরিকার মতো বহুজাতিক শহরের নেতৃত্বে এগিয়ে আসছেন, সেটি অভিবাসী সমাজে বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তির নতুন দিগন্ত খুলছে।
তসলিমার মন্তব্যে স্পষ্ট— তিনি এমন এক নেতৃত্বে আস্থা রাখেন, যিনি ধর্মনিরপেক্ষতা, শিক্ষা, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের মূল্যবোধে বিশ্বাসী।
এছাড়াও তাঁর মন্তব্য নতুন প্রজন্মের ভোটারদের কাছেও এক বৌদ্ধিক সমর্থন হিসেবে প্রতিফলিত হচ্ছে।
⚖️ চ্যালেঞ্জ ও বিতর্ক
তবে প্রশ্নও উঠেছে—
একজন মুসলিম বা দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত প্রার্থী নির্বাচিত হলে, তিনি কি বাস্তবে শহরের জটিল সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করতে পারবেন?
তসলিমার বক্তব্য কতটা রাজনৈতিক সমর্থন, আর কতটা ব্যক্তিগত আদর্শের প্রকাশ— তা নিয়েও চলছে বিতর্ক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন— এটি শুধু একটি ফেসবুক পোস্ট নয়, বরং সেক্যুলার ও প্রগতিশীল রাজনীতির পক্ষে এক বুদ্ধিজীবীর মতামত।
তসলিমা নাসরিনের এই মন্তব্য নিছক প্রশংসা নয়—এটি এক আদর্শিক অবস্থান।
তিনি যেভাবে লিখেছেন “এমন শিক্ষিত, স্মার্ট, সেক্যুলার প্রার্থী কবে আর পাওয়া যাবে”, তাতে বোঝা যায়,
তিনি এমন এক আমেরিকা দেখতে চান যেখানে নেতৃত্ব ধর্ম বা বর্ণ নয়, বরং নৈতিকতা ও উদারতার ওপর দাঁড়াবে।
নভেম্বরের নির্বাচনে যদি জোহরান মামদানি সত্যিই নিউ ইয়র্কের মেয়র হন, তবে তা শুধু এক প্রার্থীর জয় নয়, বরং তসলিমার মতো বহু মুক্তচিন্তার মানুষের বিশ্বাসের জয়ও হবে।


