Tariffs on Chinese Goods Rise to 245%, Trade War Intensifies
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর শুল্ক (tariffs) হার ২৪৫%-এর মতো উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করেছে বলে জানা গেছে। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে প্রকাশিত একটি তথ্যপত্রে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
ট্রাম্পের স্বভাবসুলভ উচ্চকণ্ঠ (tariffs)
তবে, এই ধরনের ঘোষণার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের স্বভাবসুলভ উচ্চকণ্ঠ প্রচার বা জনসমক্ষে উচ্চাভিলাষী বক্তৃতার পরিবর্তে এবার বিষয়টি নিয়ে একটি অস্বাভাবিক নীরবতা লক্ষ্য করা গেছে। এই পদক্ষেপ বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও তীব্র করে তুলেছে, যা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
হোয়াইট হাউসের তথ্যপত্র অনুসারে
হোয়াইট হাউসের তথ্যপত্র অনুসারে, চীনের পাল্টা ব্যবস্থার জবাবে এই শুল্ক (tariffs) আরোপ করা হয়েছে। তথ্যপত্রে বলা হয়েছে, “চীন এখন তার প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির উপর ২৪৫% পর্যন্ত শুল্কের (tariffs) সম্মুখীন হচ্ছে।”
ট্রাম্প প্রশাসন এই পদক্ষেপকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট ট্রেড পলিসি’র অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছে। প্রশাসনের অভিযোগ, চীন ইচ্ছাকৃতভাবে গ্যালিয়াম, জার্মেনিয়াম এবং অ্যান্টিমনির মতো গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ-প্রযুক্তি উপকরণের সরবরাহ সীমিত করছে, যা সামরিক, মহাকাশ এবং সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে, এপ্রিলের শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্যের উপর ৫৪% শুল্ক (tariffs) আরোপ করেছিল, যা পরবর্তীতে ১৪৫%-এ উন্নীত হয়। এবার এই হার আরও বৃদ্ধি পেয়ে ২৪৫%-এ পৌঁছেছে। তবে, এই শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা যেভাবে সাধারণত ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বড় ধরনের প্রচারণার মাধ্যমে করা হয়, তা এবার দেখা যায়নি।
ওটা কংগ্রেসের আসন, ভোট জিতলেই দায়িত্ব শেষ? কটাক্ষ মমতার
বিশ্লেষকদের মধ্যে বিভিন্ন জল্পনা
ট্রাম্প সাধারণত তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে বা জনসমাবেশে এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে উচ্চকণ্ঠে মত প্রকাশ করেন, কিন্তু এবার বিষয়টি নিয়ে তিনি তুলনামূলকভাবে নীরব রয়েছেন। এই নীরবতা বিশ্লেষকদের মধ্যে বিভিন্ন জল্পনার জন্ম দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এই শুল্ক বৃদ্ধি নিয়ে প্রকাশ্যে বড় ধরনের ঘোষণা না করার পিছনে ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশলগত কারণ থাকতে পারে। সম্প্রতি ট্রাম্প ‘লিবারেশন ডে’ শুল্ক নামে পরিচিত একটি কঠোর শুল্ক নীতি ঘোষণা করেছিলেন, যা পরবর্তীতে ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। এই স্থগিতকরণের লক্ষ্য ছিল আলোচনার মাধ্যমে নতুন বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করা। তবে, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই কৌশল কার্যকর হয়নি। চীনও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন পণ্যের উপর ১২৫% শুল্ক আরোপ করেছে, যা আগে ছিল ৮৪%।
এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে চীন থেকে আমদানিকৃত বিস্তৃত পণ্য, বিশেষ করে ভোক্তা ও শিল্প পণ্য, ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। যদিও কোন কোন পণ্য এই শুল্কের আওতায় পড়বে, তা এখনও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপের ফলে মার্কিন ভোক্তাদের জন্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলবে।
চীনের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা
চীনের পক্ষ থেকে এই শুল্ক বৃদ্ধির তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেছেন, “আমরা বাণিজ্য যুদ্ধের ভয় পাই না। আমরা সমতা, সম্মান এবং পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাই।” তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনকে এই শুল্ক ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে “সঠিক পথে” ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
সেমিকন্ডাক্টর এবং ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের উপরও নতুন শুল্ক
এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন সেমিকন্ডাক্টর এবং ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের উপরও নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে। জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এই খাতগুলোর আমদানি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ। এই পদক্ষেপের ফলে ওষুধের দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহে ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা মার্কিন জনগণের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ভারতের মতো দেশগুলো, যারা চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখে, তারাও এই পরিস্থিতির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারবে না। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই শুল্ক যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে নতুনভাবে গঠন করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের নীরবতা এবং চীনের কঠোর প্রতিক্রিয়া বিশ্ববাজারে এক নতুন অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে। আগামী দিনে এই বাণিজ্য যুদ্ধ কোন দিকে মোড় নেয়, তা নিয়ে সকলের দৃষ্টি এখন ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের দিকে।