রাতের অন্ধকারে তালিবান আক্রমণে রক্তাক্ত পাকিস্তান

taliban-night-attack-leaves-pakistan-bloodied

কাবুল: আফগানিস্তানের তালিবান বাহিনী শনিবার পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিশোধ গ্রহণ করে সীমান্তে আগুন ছড়িয়েছে (Taliban Night Attack)। ইসলামাবাদের উপর এয়ার স্ট্রাইক হামলা করে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। কুনার, নাঙ্গারহার, পাক্তিয়া, খোস্ত এবং হেলমান্দ—এই সব প্রদেশের তালেবান কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে সংঘর্ষ চলছে। এই ঘটনা শুধু সামরিক নয়, বছরের পর বছর ধরে চলা পুরনো ক্ষতেরও প্রতিফলন।

Advertisements

   

আফগানিস্তানের সামরিক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “পাকিস্তানি বাহিনীর হাওয়াই হামলার প্রতিশোধে পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবাহিনী বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি চেকপোস্টে ভারী সংঘর্ষে জড়িয়েছে।” এএফপি-র উদ্ধৃতি অনুসারে, বৃহস্পতিবার কাবুলে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আরেকটি।

পরের দিন তালেবান-নিয়ন্ত্রিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পাকিস্তানকে দায়ী করে বলে, “এটি আমাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।” ইসলামাবাদ হামলার দায় স্বীকার না করলেও, কাবুলকে সতর্ক করে বলেছে, “আফগান মাটিতে পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি)-কে আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করুন।” টিটিপি, যারা আফগানিস্তানে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেয় এবং আফগান তালেবানের মতোই আদর্শ পোষণ করে, ২০২১ সাল থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের শত শত হত্যার জন্য অভিযুক্ত।

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এএফপি-কে বলেন, “সন্ধ্যায় তালেবান বাহিনী অস্ত্র ব্যবহার শুরু করে। আমরা প্রথমে হালকা আর্টিলারি এবং পরে ভারী কামান চালাই চারটি স্থানে।” পাকিস্তানি বাহিনী ভারী গুলিতে জবাব দেয় এবং তিনটি আফগান কোয়াড কপটারকে গুলি করে নামায়।

Advertisements

সংঘর্ষ তীব্র হলেও, এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর নেই। স্থানীয়রা ভয়ে কাঁপছেন; সীমান্তের পর্বতমালায় টিটিপি-এর সদস্যরা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা বাড়িয়েছে, যা স্থানীয় গ্রামগুলোকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে। এই সংঘর্ষ দুই দেশের দীর্ঘদিনের উত্তেজনার অংশ।

২০২১ সালে আফগান তালিবান ক্ষমতায় আসার পর টিটিপি-এর হামলা বেড়েছে, যা পাকিস্তানকে অভিযোগ করে যে আফগানিস্তান তাদের আশ্রয় দিচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৫ সালে টিটিপি-এর আক্রমণ ২০২৪ সালের চেয়ে বেশি হয়েছে। সীমান্তের এই ‘পর্বতীয় যুদ্ধক্ষেত্র’ স্থানীয়দের জীবনকে ধ্বংস করছে—গ্রামগুলোতে স্কুল বন্ধ, শিশুরা ভয়ে রাত জাগে।

এক স্থানীয় গ্রামবাসী বলেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু সীমান্তের রক্তপাত আমাদের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে।”আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন। ভারত এবং অন্যান্য দেশ এই উত্তেজনা নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে, যাতে এটি দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত না করে। তালিবান মন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরের পরও এই সংঘর্ষ দেখায় যে আফগানিস্তানের কূটনীতি জটিল। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ আহত সৈন্যদের দেখার পর সতর্ক করে বলেছেন, আফগানিস্তানকে দায়িত্বশীল হতে হবে। কিন্তু কাবুল এই অভিযোগ অস্বীকার করে।