তাইওয়ানকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চাপ বাড়াচ্ছে চীন

তাইওয়ান এবং চীনের (china) মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যে, গত মাসে বেইজিং তাইওয়ানের উত্তর ও দক্ষিণ জলসীমায় দুটি বিমানবাহী রণতরী গ্রুপ এবং অসংখ্য যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন…

china increasing pressure for taiwan

তাইওয়ান এবং চীনের (china) মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যে, গত মাসে বেইজিং তাইওয়ানের উত্তর ও দক্ষিণ জলসীমায় দুটি বিমানবাহী রণতরী গ্রুপ এবং অসংখ্য যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে, বলে জানিয়েছেন একজন তাইওয়ানি নিরাপত্তা কর্মকর্তা।

প্রতিবেদন অনুসারে

দ্য ইউরেশিয়ান টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, ১ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত হলুদ সাগর থেকে দক্ষিণ চীন সাগর(china) পর্যন্ত প্রায় ৭০টি চীনা জাহাজ, যার মধ্যে নৌবাহিনীর জাহাজও রয়েছে, তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।

   

এই তথ্য দিয়েছেন একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা যিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, চীন(china) তাইওয়ানের চারপাশে যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধবিমানের মোতায়েন বাড়িয়েছে, তাইপেকে তাদের সার্বভৌমত্বের দাবি মেনে নিতে চাপ সৃষ্টি করছে।

চীন (china)তাইওয়ানকে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সামরিক শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি, যা দ্বীপটির জন্য ক্রমাগত আক্রমণের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্য ইউরেশিয়ান টাইমসের উদ্ধৃতি অনুসারে, নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, “তাদের সামরিক কার্যক্রম এবং ধূসর অঞ্চলের কার্যকলাপে পুরো দ্বীপ শৃঙ্খল জুড়ে উল্লেখযোগ্য মোতায়েন জড়িত, যা একটি ব্যাপক সর্বোচ্চ চাপের কৌশলের প্রতিনিধিত্ব করে।”

তিনি আরও জানিয়েছেন, “গড়ে ৫০ থেকে ৭০টি নৌ ও সরকারি জাহাজ কার্যক্রম চালাচ্ছে, সঙ্গে বিভিন্ন সামরিক বিমানের শতাধিক উড্ডয়ন হয়েছে, যা ধারাবাহিকভাবে উত্তেজনা সৃষ্টির মিশনে নিয়োজিত।”

১৯ মে, তাইওয়ানের পেঙ্ঘু দ্বীপপুঞ্জের কাছে তাইওয়ান প্রণালীতে ৩০টি অজ্ঞাত পরিচয়ের চীনা জাহাজ দেখা গেছে, যেগুলির কোনও নথিপত্র বা বন্দর নিবন্ধন ছিল না। এই জাহাজগুলি “ইচ্ছাকৃতভাবে ভীতি প্রদর্শনের জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল,” বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপত্তা কর্মকর্তা।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মে মাসে মোট ৭৫টি চীনা বিমান তিনটি “যুদ্ধ প্রস্তুতি টহল” মিশনে দ্বীপের কাছে অংশ নিয়েছিল। এই ক্রিয়াকলাপগুলি চীনের “সামরিক সম্প্রসারণ” প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়, যার লক্ষ্য পুরো দ্বীপ শৃঙ্খল নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, বলে কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

চীনের কৌশলগত উদ্দেশ্য

চীনের (china)এই সামরিক কার্যক্রম তাইওয়ানের স্বাধীনতার দাবিকে দমন করার জন্য একটি কঠোর বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাইওয়ানের বর্তমান রাষ্ট্রপতি লাই চিং-তে ক্ষমতায় আসার পর থেকে চীন তাইওয়ানের আশপাশে বেশ কয়েকটি বড় মাপের সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছে।

এই মহড়াগুলি তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং মনোবলকে ক্লান্ত করার পাশাপাশি আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে বলে মনে করা হয়। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা চীনের এই ক্রিয়াকলাপের জবাবে উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে এবং নিজেদের বিমান ও জাহাজ মোতায়েন করেছে।

Advertisements

অপারেশন সিঁদুরের পর ফের সাফল্য, পাকিস্তানকে দুরমুশ করল ভারত

আঞ্চলিক প্রভাব

চীনের (china)এই সামরিক মোতায়েন শুধু তাইওয়ানের জন্যই নয়, জাপান, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো আঞ্চলিক দেশগুলির জন্যও উদ্বেগের বিষয়। হলুদ সাগর এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্রিয়াকলাপ যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব এবং তার মিত্রদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।

তাইওয়ানের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মে মাসে চীনের কার্যক্রম “পূর্বের তুলনায় আরও উসকানিমূলক” ছিল। এছাড়া, মিয়াকো প্রণালী দিয়ে কিছু জাহাজ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করেছে, যেখানে তারা “দীর্ঘ-পাল্লার প্রশিক্ষণ, যার মধ্যে সমন্বিত বিমান-সমুদ্র মহড়া” পরিচালনা করেছে।

তাইওয়ানের প্রতিক্রিয়া

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা চীনের বিমানবাহী রণতরী শানডং-এর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে, যা পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করেছে। তাইওয়ান নিজেদের সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করেছে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তাইওয়ানের সরকার বেইজিংয়ের সার্বভৌমত্বের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, কেবল তাইওয়ানের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

চীনের (china) এই ক্রিয়াকলাপ যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় অনানুষ্ঠানিক মিত্র, চীনের এই কার্যক্রমকে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ সম্প্রতি এশিয়া সফরে এসে চীনের “আগ্রাসন” মোকাবিলায় মার্কিন সামরিক জোটকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাইওয়ানের একটি অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, হেগসেথের সফর এবং মার্কিন-চীন বাণিজ্য আলোচনার প্রেক্ষাপটে চীন তাইওয়ানকে একটি “অজুহাত” হিসেবে ব্যবহার করছে।

চীনের (china)এই সামরিক মহড়া এবং তাইওয়ানের চারপাশে বিপুল সামরিক শক্তি মোতায়েন তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই কার্যক্রমের প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখছে।

চীনের (china)এই কৌশলগত পদক্ষেপ তাইওয়ানের স্বাধীনতার দাবিকে দমন করার পাশাপাশি আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। তাইওয়ানের জনগণ এবং সরকার এই হুমকির মুখে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে, তবে ভবিষ্যৎ উত্তেজনা এড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।