বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই হাত মেলাল রাশিয়া-ইরান

Political Tensions Russia and iran

মস্কো, ২৪ সেপ্টেম্বর: বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। তার মধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে হাত মেলাল ইরান (Political Tensions)। রাশিয়া এবং ইরানের মধ্যে ছোট আকারের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারকচুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাশিয়ার স্টেট নিউক্লিয়ার কর্পোরেশন রোজাটমের প্রধান অ্যালেক্সেই লিখাচেভ এবং ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (এইওআই) এর প্রধান মোহাম্মদ এসলামীর মধ্যে এই চুক্তি মস্কোতে স্বাক্ষরিত হয়।

Advertisements

রোজাটম এটিকে “কৌশলগত প্রকল্প” হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা ইরানের পারমাণবিক শক্তি ক্ষমতা ২০৪০ সালের মধ্যে ২০ গিগাওয়াটে (জিডব্লিউ) পৌঁছানোর লক্ষ্যে সহায়ক হবে। এই চুক্তি দুই দেশের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার নতুন মাইলফলক এবং আন্তর্জাতিক নিউক্লিয়ার অ্যাজেন্সি (আইএইএ)-র তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।

ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামী, যিনি উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন, সোমবার মস্কোতে রাশিয়ান পারমাণবিক সপ্তাহে অংশ নেওয়ার সময় জানিয়েছিলেন যে, এই চুক্তির মাধ্যমে ইরানে আটটি ছোট আকারের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে চারটি দক্ষিণাঞ্চলীয় বুশেহরে অবস্থিত হবে, যেখানে ইরানের একমাত্র কার্যকরী পারমাণবিক কেন্দ্র (ক্যাপাসিটি প্রায় ১ জিডব্লিউ) রয়েছে।

এই কেন্দ্রটিও রাশিয়া দ্বারা নির্মিত হয়েছে। এসলামী বলেছেন, “এই প্রকল্প ইরানের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ, যা ২০৪০ সালের মধ্যে পারমাণবিক শক্তির মাধ্যমে ২০ জিডিব্লিউ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে সহায়তা করবে।” বর্তমানে ইরান বিদ্যুৎ সংকটের মুখোমুখি, যা উচ্চ চাহিদার সময়ে ফসিল ফুয়েলের উপর নির্ভরতা বাড়িয়েছে।

এই চুক্তির পটভূমি রাশিয়া-ইরানের দীর্ঘদিনের সহযোগিতা। ১৯৭০-এর দশকে জার্মান সহায়তায় শুরু হওয়া বুশেহর প্রকল্পটি রাশিয়ার সহায়তায় ২০১১ সালে সম্পন্ন হয়। বর্তমানে বুশেহরের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ইউনিটের নির্মাণও রাশিয়ার দ্বারা চলছে। এছাড়া, ইরান-হরমোজ প্রকল্পে ৫ জিডিব্লিউ ক্যাপাসিটির চারটি রিয়্যাক্টর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যার জন্য ১৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন।

রাশিয়া এই প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থায়নও প্রদান করবে, যা মস্কোর ক্রেডিট লাইনের মাধ্যমে সম্ভব হবে। এসলামীর মতে, চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য প্রয়োজনীয় আলোচনা এবং জরিপ সম্পন্ন হয়েছে, এবং স্থান নির্বাচন এবং প্রস্তুতি করা হয়েছে।এই স্মারকচুক্তি দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রতীক। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত ২০ বছরের কৌশলগত চুক্তির অধীনে রাশিয়া ইরানকে গ্যাস সরবরাহের ৫৫ বিলিয়ন ঘনমিটারের চুক্তিও করেছে।

Advertisements

ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়া এবং ইরানের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। রাশিয়া ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সমর্থন করছে, যখন ইরান রাশিয়াকে সামরিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছে। রোজাটমের লিখাচেভ বলেছেন, “এই প্রকল্প দুই দেশের জন্যই লাভজনক এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলবে।”আন্তর্জাতিক মহলে এই চুক্তি বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি (ই-৩) ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি (জেসিপিওএ) লঙ্ঘনের অভিযোগে ইরানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রস্তাব করেছে। ১৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রস্তাব খারিজ হয়েছে, যেখানে রাশিয়া এবং চীন ভেটো দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ছোট কেন্দ্রগুলো ইরানের বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হলেও, পশ্চিমা দেশগুলো এটিকে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার অংশ হিসেবে দেখছে।

ইরানের অবস্থান, এটি শান্তিপূর্ণ শক্তির উন্নয়ন।এই চুক্তি ইরানের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করবে। ফসিল ফুয়েলের উপর নির্ভরতা কমিয়ে পরিবেশবান্ধব শক্তির দিকে এগিয়ে যাওয়া ইরানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ার প্রযুক্তি এবং অর্থায়নের মাধ্যমে এই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরিবর্তিত একাদশ ভারতের, তারকা ছাড়াই মাঠে টাইগাররা

দুই দেশের নেতারা এই সহযোগিতাকে “দীর্ঘমেয়াদী বন্ধন” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে, আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেও এই চুক্তি রাশিয়া-ইরানের জোটকে আরও শক্তিশালী করেছে। ভবিষ্যতে এই প্রকল্পগুলো ইরানের শক্তি সেক্টরকে রূপান্তরিত করবে এবং দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে।