বাংলাদেশে চিন্তা বাড়াচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থী! কি উদ্যোগ ইউনূসের

বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের (Yunus)রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে মালয়েশিয়ার প্রভাব, বিশেষ করে ২০২৫ সালে দেশটির আসিয়ান (অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস) সভাপতিত্বের ভূমিকাকে…

Yunus

বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের (Yunus)রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে মালয়েশিয়ার প্রভাব, বিশেষ করে ২০২৫ সালে দেশটির আসিয়ান (অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস) সভাপতিত্বের ভূমিকাকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Yunus)মালয়েশিয়ার জাতীয় সংবাদ সংস্থা বারনামাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, “মালয়েশিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিজ্ঞতা এবং আসিয়ানের নেতৃত্বে থাকার কারণে এই সংকট সমাধানে একটি সমন্বিত আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া তৈরিতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।” এই সফরে ড. ইউনূস মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

   

২০১৭ সালে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক নিপীড়নের ফলে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসে, যার ফলে কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির গড়ে ওঠে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে, এবং গত ১৮ মাসে আরও ১ লাখ ৫০ হাজার নতুন শরণার্থী এসেছে।

মায়ানমারে আরাকান আর্মি এবং সামরিক বাহিনীর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষের কারণে এই সংখ্যা আরও বাড়ছে। ড. ইউনূস জানিয়েছেন, “এই পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই শরণার্থীদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তহবিল বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের জন্য এটি একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ।”

মালয়েশিয়া, যদিও ১৯৫১ সালের রাষ্ট্রসংঘ শরণার্থী কনভেনশন বা ১৯৬৭ সালের প্রোটোকলের স্বাক্ষরকারী নয়, মানবিক কারণে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। মালয়েশিয়ার এই অভিজ্ঞতা এবং ২০২৫ সালে আসিয়ানের সভাপতিত্ব তাদের এই সংকটে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একটি অনন্য অবস্থানে রেখেছে।

ড. ইউনূস বলেন, “আমরা আশা করছি, মালয়েশিয়া তার প্রভাব ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় এই সংকট সমাধানে সহায়তা করবে।” মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমও বলেছেন, “বাংলাদেশ যে বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে, তা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। মায়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং শরণার্থীদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা আমাদের অগ্রাধিকার।”

এই সংকটের মানবিক ও রাজনৈতিক দিক মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পরিকল্পনা করেছে। প্রথমটি আগস্টের শেষে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হবে, যা ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার অষ্টম বার্ষিকীর সঙ্গে মিলে যায়। দ্বিতীয়টি সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি এবং তৃতীয়টি ডিসেম্বরে কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত হবে।

ড. ইউনূস মালয়েশিয়াকে এই সম্মেলনগুলোতে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই সম্মেলনগুলো রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।”

Advertisements

আসিয়ানের ঐকমত্য-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া এবং মায়ানমারের সদস্যপদ এই সংকট সমাধানে বড় চ্যালেঞ্জ। মিয়ানমার ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে চলমান গৃহযুদ্ধে জর্জরিত, যা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টাকে আরও জটিল করেছে। আসিয়ানের অ-হস্তক্ষেপ নীতির কারণে এই সংকটে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

তবে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলো মানবিক সহায়তার পক্ষে কথা বলেছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ঘোষণা করেছেন, মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স এবং থাইল্যান্ডের সঙ্গে মিলে মিয়ানমারে একটি যৌথ প্রতিনিধিদল পাঠাবে, যারা শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তার জন্য চাপ সৃষ্টি করবে।

বাংলাদেশের কৌশলের মধ্যে রয়েছে আসিয়ানের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং মালয়েশিয়ার মতো সহানুভূতিশীল দেশগুলোর সমর্থন অর্জন। ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ আসিয়ান এবং দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য সার্কের মধ্যে একটি সেতু হতে পারে।”

তিনি মালয়েশিয়ার কাছে বাংলাদেশের আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার মর্যাদা অর্জনের জন্য সমর্থন চেয়েছেন। এই সফরে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে, যার মধ্যে রয়েছে শক্তি, বাণিজ্য এবং শিক্ষা সহযোগিতা।

রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার আসিয়ান সভাপতিত্বকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে। মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা এবং আঞ্চলিক প্রভাব এই সংকটের সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

দেশে ফিরছেন শুভাংশু শুক্লা, প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে করবেন দেখা 

আসন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলো এবং আসিয়ানের সমর্থন এই সংকটের দ্রুত সমাধানে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং মালয়েশিয়ার সহযোগিতা এই মানবিক সংকট মোকাবিলায় নতুন আশার আলো সৃষ্টি করতে পারে।