ভারত-রাশিয়া কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হল সোমবার সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) সম্মেলনের মঞ্চে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি চাপ ও শুল্কবৃদ্ধির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (PM Modi-Putin) আবারও দ্বিপাক্ষিক বিশেষ ও প্রিভিলেজড স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার বার্তা দিলেন। তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত SCO সম্মেলনের ফাঁকে মোদি-পুতিন বৈঠক প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে এবং পরে তাঁরা প্রায় ৪৫ মিনিটের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেন।
মোদি বৈঠকের শুরুতে হিন্দিতে বলেন, “ভারত এবং রাশিয়া সবসময় একে অপরের পাশে থেকেছে সবচেয়ে কঠিন সময়েও। এই সম্পর্ক শুধুমাত্র দুই দেশের জনগণের জন্য নয়, বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি জানান, ডিসেম্বর মাসে ভারতের মাটিতে ২৩তম বার্ষিক সম্মেলনে পুতিনকে স্বাগত জানানোর জন্য ১৪০ কোটি ভারতীয় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
পুতিন মোদিকে “প্রিয় বন্ধু” বলে সম্বোধন করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গভীরতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “রাশিয়া এবং ভারতের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ বন্ধুত্বপূর্ণ এবং আস্থার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ইতিবাচক গতিতে এগোচ্ছে।”
প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর সামাজিক মাধ্যম পোস্টে SCO সম্মেলন থেকে পুতিনের সাথে তাঁর যাত্রার একটি ছবি শেয়ার করেন। ছবিতে দেখা যায়, পুতিনের বুলেটপ্রুফ Aurus লিমুজিনে সম্মেলনের ভেন্যু থেকে হোটেলে যাচ্ছেন দুই নেতা। মোদি লেখেন, “রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা সবসময়ই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।” আরেকটি পোস্টে মোদি জানান, বৈঠকে বাণিজ্য, সার, মহাকাশ গবেষণা এবং সুরক্ষা খাতে সহযোগিতা আরও গভীর করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি লিখেছেন, “ভারত-রাশিয়া বিশেষ ও প্রিভিলেজড স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতের রপ্তানির উপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করেছেন, বিশেষ করে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে। ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের এই তেল কেনা নিয়ে সরব হলেও ভারত জোর দিয়ে বলেছে যে এটি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা থেকেই নেওয়া পদক্ষেপ। ভারত রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি খাতে ঐতিহ্যবাহী সম্পর্কের পক্ষে সওয়াল করেছে এবং জানিয়েছে এই সম্পর্ককে কোনো তৃতীয় দেশের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত নয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য রেকর্ড ৬৮.৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। তবে এর মধ্যে ভারতের রপ্তানি মাত্র ৪.৮৮ বিলিয়ন ডলার, যা বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। ভারতীয় কর্মকর্তারা এই অসামঞ্জস্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং রাশিয়ার বাজারে প্রবেশাধিকারের পাশাপাশি বাণিজ্য বৈচিত্র্যের উপর জোর দিয়েছেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাশিয়ার উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা জারির পর ভারতীয় তেল আমদানি বেড়ে প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সমীর পাটিল বলেন, “মার্কিন শুল্কবৃদ্ধি এবং ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া অবস্থান এই বৈঠকের প্রেক্ষাপটকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। যদিও মোদি-পুতিন সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রদর্শন করেছেন, বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে দিল্লি ও মস্কো উভয়কেই আরও পদক্ষেপ নিতে হবে।”
মোদি-পুতিন বৈঠকে ইউক্রেন সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান নিয়েও আলোচনা হয়েছে। মোদি বলেন, “আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠার সাম্প্রতিক সমস্ত প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই। আশা করি সমস্ত পক্ষ গঠনমূলক পদক্ষেপ নেবে। সংঘাত বন্ধ করে দীর্ঘমেয়াদি শান্তির পথ খুঁজে বের করতে হবে।”