শান্তির বার্তা দিয়েও শেহবাজের হুঁশিয়ারি: ‘প্রস্তুত যেকোনো যুদ্ধের জন্য’

Pakistan response Pahalgam terror attack ইসলামাবাদ: কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এ জঙ্গি হামলার পর অবশেষে প্রতিক্রিয়া জানালেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। তাঁর বক্তব্যে শোনা গেল দ্বৈত সুর— একদিকে…

Pakistan response Pahalgam terror attack

Pakistan response Pahalgam terror attack

ইসলামাবাদ: কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এ জঙ্গি হামলার পর অবশেষে প্রতিক্রিয়া জানালেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। তাঁর বক্তব্যে শোনা গেল দ্বৈত সুর— একদিকে শান্তির বার্তা, অন্যদিকে কড়া হুঁশিয়ারি। শান্তি প্রস্তাবের আড়ালেই ছিল ভারতের কড়া জবাবের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার বারুদ।

   

“নিরপেক্ষ তদন্তে রাজি, তবে আপস নয়”— স্পষ্ট বার্তা শরিফের

পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাকিস্তান কোনও রকমের সংঘর্ষ চায় না। তবে দেশের সার্বভৌমত্ব ও আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে আমরা কোনও আপস করব না। আমরা নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত৷”

যেখানে পাকিস্তানের অন্যান্য মন্ত্রীরা ভারতের বিরুদ্ধে “সাজানো হামলার” অভিযোগ তুলেছেন, সেখানেই শরীফের এই বক্তব্য কূটনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত সংযত ও দায়িত্বশীল বলে মনে করা হচ্ছে। তবু ভারতের ওপর পরোক্ষভাবে চাপ বজায় রাখার কৌশল যে তিনি বজায় রেখেছেন, তা স্পষ্ট।

পহেলগাঁও হামলা: ঘনঘটা রাজনৈতিক আবহ Pakistan response Pahalgam terror attack

পহেলগাঁও-এর বৈসরন উপত্যকায় ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলাকে কাশ্মীরের সাম্প্রতিক অতীতের অন্যতম নৃশংস জঙ্গি হানা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। লস্কর-ই-তইবার নামে অভিযুক্ত সংগঠনটি ২৬ জন পর্যটককে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে এক প্রবল প্রতিক্রিয়ার ঢেউ ওঠে।

নয়াদিল্লির একাধিক শীর্ষ মহল পাকিস্তানকে ‘পরোক্ষভাবে দায়ী’ করে দাবি করে, এই হামলা সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়ার দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ। ফলত, ভারত একের পর এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে:

*সিন্ধু জলচুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত

*পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা প্রদান বন্ধ

*ওয়াঘা-অটারি সীমান্তে পারাপার বন্ধ

এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ভারত স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে— সন্ত্রাসবাদের কোনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতের জবাব শুধু সীমান্তে নয়, কূটনীতির টেবিলেও মিলবে।

সিন্ধু জলচুক্তি: কূটনৈতিক চাপের কেন্দ্রে জল

শেহবাজ শরীফের সবচেয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে জল নিয়ে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলচুক্তি (Indus Waters Treaty) এখন পর্যন্ত দুই দেশের বিরোধপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যেও কার্যকর ছিল। তবে এবার প্রথমবারের মতো ভারত তা স্থগিতের পথে হাঁটছে। শরীর বলেন, “সিন্ধু অববাহিকার জল পাকিস্তানের কৃষির প্রাণরস। কেউ যদি জল আটকাতে চায়, তার জবাব আমরা পূর্ণ শক্তি দিয়ে দেব৷” 

পাকিস্তানের কৃষি উৎপাদনের ৮০% ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ নির্ভর করে এই সিন্ধু নদব্যবস্থার উপর। ভারতের জল নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত বাস্তবে কার্যকর হলে, তা পাকিস্তানের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তার উপর বড় ধাক্কা আনতে পারে।

পাল্টা কৌশল: আকাশপথ বন্ধ, বার্তা কূটনৈতিক মহলে

পাকিস্তান ইতিমধ্যেই ভারতীয় বিমানসংস্থার জন্য তাদের আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে শুধু যাত্রী পরিবহনই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার আকাশসীমা কূটনৈতিকভাবে নতুন এক উত্তেজনার মুখে পড়েছে।

উল্লেখ্য, এই একই পদ্ধতি দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালে বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের পরে। তখনও দু’দেশই পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল বিমান, বাণিজ্য ও জলচুক্তি নিয়ে।

জল, রক্ত আর কূটনীতির মাঝে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন মোড়
পহেলগাঁও হামলার পর পরিস্থিতি যেভাবে দ্রুত রূপ নিচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে এক নতুন ধরণের “অঘোষিত ঠান্ডা যুদ্ধ” শুরু হয়েছে— যেখানে অস্ত্র নয়, ব্যবহার হচ্ছে কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, জলচুক্তি ও যোগাযোগব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ।

শেহবাজ শরীফের এই সাম্প্রতিক বক্তব্যে যেমন শান্তির সুর রয়েছে, তেমনই রয়েছে চাপ সৃষ্টি করার দৃষ্টান্তও। আন্তর্জাতিক মহল এখন তাকিয়ে— দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী কোন পথে এগোয়।

 World: Shehbaz Sharif reacts to Pahalgam attack, offers peace but warns against compromise. India suspends Indus Treaty, halts visas. 1 Diplomatic tension rises over terror.