পাকিস্তানে বড় মাপের সামরিক পুনর্গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছে। দেশটির সেনাবাহিনী (Pakistan Army) নিশ্চিত করেছে—ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য পাকিস্তান আর্মির প্রধান এবং একইসঙ্গে Chief of Defence Forces (CDF) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমন দ্বৈত দায়িত্ব পাকিস্তানের সামরিক ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল এবং এর রাজনৈতিক—কূটনৈতিক পরিণতি নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন—এই ঘোষণা শুধু পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার ভারসাম্যই বদলে দেবে না, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলবে। বিশেষত, সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন উঠছে—“Operation Sindoor 2 কি তবে শুরু হতে চলেছে?”
পাকিস্তানে এটি কী ধরনের রদবদল? কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সাধারণত পাকিস্তানে সেনাপ্রধানের মেয়াদ তিন বছর হয়। কিন্তু এবার শুধু সেই মেয়াদ বাড়ানোই নয়, আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল উপাধি দেওয়া হয়েছে—যা পাকিস্তানে সর্বশেষ দেওয়া হয়েছিল চার দশক আগে। এর পাশাপাশি তাঁকে সমস্ত তিন বাহিনীর সঙ্গেও সরাসরি সমন্বয়ের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
এই তিনটি সিদ্ধান্ত একত্রে বোঝাচ্ছে—
-
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ
-
রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপর সেনাবাহিনীর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা
-
সামরিক আধুনিকীকরণ ও সীমান্ত নীতি নতুন আকার পাওয়া
কূটনৈতিক মহলের ভাষায়—
“Pakistan is officially entering a new era of military consolidation.”
🔍 মুনিরের পদোন্নতি কেন এখন? অভ্যন্তরীণ সংকটই কি মূল কারণ?
পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা…
ইমরান খানের সাথে তিক্ত বৈরিতা…
বেলুচিস্তান–খাইবার–ওয়াজিরিস্তানে TTP ও BLA-র বাড়তে থাকা আক্রমণ…
অর্থনীতির ধস…
বিদেশি মুদ্রার তীব্র সংকট…
এই পুরো পরিস্থিতিতে সরকারের স্থায়িত্ব প্রায় পুরোপুরি সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভরশীল। মুনিরের প্রতি সরকার ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের আস্থা আছে—বিশেষত গোয়েন্দা কাঠামো ও কাউন্টারটেরর অপারেশনে তাঁর অভিজ্ঞতা বিশাল।
অনেকে মনে করছেন—এই নিয়োগের মাধ্যমে পাকিস্তান পুনরায় এক “security-state”-এর দিকে ধাবিত হচ্ছে।
🪖 “Operation Sindoor 2” — কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছে সামাজিক মাধ্যম?
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে কয়েক সপ্তাহ ধরেই উত্তেজনা বাড়ছে। ভারতীয় BSF ইতিমধ্যে বিভিন্ন রিপোর্টে দাবি করেছে—“Operation Sindoor”-এ ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পাকিস্তানের ১১৮টি পোস্ট ধ্বংস করা হয়েছিল।
এবার মুনিরকে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় রেখে পাকিস্তান কি জবাবি অভিযান বা সীমান্তে নতুন কৌশলগত তৎপরতা শুরু করবে?
বিশ্লেষকদের মতে—
-
TTP-র বিরুদ্ধে মুনির কঠোর অবস্থান নিতে পারেন
-
বেলুচিস্তানে বড় অপারেশন সম্ভব
-
ভারতের বিরুদ্ধে সীমান্তে “calibrated escalation” হতে পারে
-
আফগানিস্তান সীমান্তে ড্রোন ও আর্টিলারি ব্যবহারের সম্ভাবনা বাড়ছে
তাই সামাজিক মাধ্যম গুঞ্জন তুলছে—
“OpSindoor2 loading?”
যদিও এখনো পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সামরিক অপারেশন ঘোষণা করেনি, কিন্তু পদোন্নতির সময়কাল দেখে অনেকে সন্দেহ করছেন—নতুন শক্তিশালী সামরিক কাঠামো গড়ে তুলে পাকিস্তান বড় পদক্ষেপ নিতে চাইছে।
🧭 আঞ্চলিক প্রভাব: ভারত, আফগানিস্তান ও চীনের দিকে নজর
ভারত:
ভারতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন—মুনিরের নেতৃত্বে পাকিস্তান সীমান্তে আরও আক্রমণাত্মক অবস্থান নিতে পারে। বিশেষত LOC-এ স্নাইপার ফায়ার, ড্রোন অনুপ্রবেশ, ও narcoterrorism বাড়তে পারে।
আফগানিস্তান:
তালিবান সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়। আইএস–কে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার অভিযোগে দুই দেশের মধ্যে প্রচুর উত্তেজনা। মুনির হয়তো আফগান সীমান্তে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেন।
চীন:
CPEC-এ চীনের বড় অংশীদারিত্ব থাকার কারণে বেলুচিস্তানে সুরক্ষা পরিস্থিতির উন্নতি চীনের দাবি। মুনির সেই দাবিই পূরণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
🗳️ পাকিস্তানের রাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলবে এই নিয়োগ
-
এখন থেকে পাঁচ বছর সেনাবাহিনী অপরিবর্তিত নেতৃত্বে থাকবে
-
রাজনৈতিক দলগুলির ওপর চাপ বাড়বে
-
ইমরান খানপন্থী আন্দোলন আরও কঠোর দমন হতে পারে
-
মুনিরের সমর্থক নিরাপত্তা প্রশাসন নতুন নির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে
দক্ষিণ এশিয়া কি আরেক নতুন সামরিক উত্তেজনার দিকে এগোচ্ছে?
আসিম মুনিরের এই অভূতপূর্ব পদোন্নতি পাকিস্তান শুধু অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নয়, তার পররাষ্ট্রনীতি ও সীমান্ত কৌশলেও বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এখন প্রশ্ন—
-
পাকিস্তান কি নতুন সামরিক অভিযান শুরু করবে?
-
ভারত ও আফগানিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা কি বাড়বে?
-
নাকি এটি সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ?
সব নজর এখন ইসলামাবাদ ও GHQ রাওয়ালপিন্ডির দিকে।
