ইসলামাবাদ: পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তানে ভারতীয় সেনার অপারেশন সিঁদুর জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের শীর্ষ নেতৃত্বকে কার্যত স্তব্ধ করেছে। কয়েক মাস আগে বাহাওয়ালপুরসহ একাধিক ঘাঁটিতে ভারতের টার্গেটেড হামলায় এই সংগঠনের প্রধান মৌলানা মাসুদ আজহারের পরিবার টুকরো টুকরো হয়ে যায়, যা তারা নিজেই স্বীকার করেছে।
মাসুদ আজহারের পরিবার ছিন্নভিন্ন
একটি ভাইরাল ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, জইশ কমান্ডার মাসুদ ইলিয়াস কাশ্মীরি বলেন, “দিল্লি, কাবুল, কান্দহারের বিরুদ্ধে সীমান্ত রক্ষার নামে লড়েছি। সবকিছু উৎসর্গ করার পর, ৭ মে বাহাওয়ালপুরে ভারতীয় সেনার হামলায় মাসুদ আজহারের পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।” ভিডিওতে কাশ্মীরির চারপাশে বন্দুক হাতে নিরাপত্তাকর্মীদের উপস্থিতি স্পষ্ট।
‘অপারেশন সিঁদুর’ চালানো হয়েছিল ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও-এ সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে, যেখানে ২৫ জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়। যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক৷ এর পরেই বাহাওয়ালপুরের হামলার পাশাপাশি ভারত আরও আটটি সন্ত্রাস ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে ধ্বংস করে দেয়।
জইশের সদর দফতর op sindoor jaish-e-mohammed
বাহাওয়ালপুর পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত এবং জইশের সদর দফতর মারকাজ সুবহানআল্লাহ এই শহরে ১০০ কিলোমিটার গভীরে ছিল। অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনী এই জঙ্গি ঘাঁটিতে আঘাত হানে এবং পুরো কমপ্লেক্স ধ্বংস করে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে জইশের সদর দফতর।
এই হামলায় মাসুদ আজহারের পরিবারের ১০ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ছিলেন আজহারের বোন, বোনের স্বামী এবং কয়েকজন শিশু। এছাড়া চারজন জঙ্গিও নিহত হন। পাকিস্তানি মিডিয়া প্রাথমিকভাবে ১৪ জন নিহতের খবর জানিয়েছিল, তবে আজহার নিজেই নিশ্চিত করেছেন যে তার পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এই কমপ্লেক্সে যুবকদের প্রশিক্ষণ এবং মৌলবাদী শিক্ষা দেওয়া হত।
অপারেশন সিঁদুরের সময় ৭ মে ভোর ১:০৫ মিনিটে ভারতীয় বিমান বাহিনী নয়টি জঙ্গি শিবিরে হামলা চালায়, যার মধ্যে জইশ, লস্কর-ই-তৈয়বা এবং হিজবুল মুজাহিদিনের শিবিরও ছিল। এর চারটি অবস্থান পাকিস্তানে (শিয়ালকোট, মুরিদকে এবং বাহাওয়ালপুর) এবং পাঁচটি পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত।
মাসুদ আজহার ২০০০ সালে জইশ-ই-মহম্মদ প্রতিষ্ঠা করেন। ৫৬ বছর বয়সী আজহার দীর্ঘ সময় ধরে আন্তর্জাতিক জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত। তার নেতৃত্বে সংগঠন পরিকল্পনা করেছে ২০০১ সালের সংসদ হামলা, ২০০৮ সালের মুম্বই হামলা, ২০১৬ সালের পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে হামলা এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জইশের এই স্বীকারোক্তি কেবল তাদের নেতৃত্বের ক্ষতি প্রকাশ করছে না, বরং ভারতের অপারেশন সিঁদুর কৌশলগত সফলতার প্রমাণ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।