পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশে ফের ভয়াবহ নাশকতার ঘটনা ঘটল। মঙ্গলবার একটি বিস্ফোরণের ফলে জাফর এক্সপ্রেস (Jaffar Express blast) নামে পরিচিত পেশোয়ারগামী যাত্রীবাহী ট্রেনটির একাধিক বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। ঘটনায় বহু যাত্রী আহত হয়েছেন এবং তাঁদের দ্রুত উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ চলছে এবং পুলিশ ও রেল কর্তৃপক্ষ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনটি কোয়েটা থেকে পেশোয়ার যাচ্ছিল। সকালবেলায় সিন্ধ প্রদেশের শেখারপুর জেলার সুলতান কোটের নিকটবর্তী সোমারওয়া এলাকায় হঠাৎই রেললাইনের পাশে বিস্ফোরণ ঘটে। তীব্র শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা এবং ট্রেনের একাধিক কোচ লাইনচ্যুত হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে এটি একটি পরিকল্পিত নাশকতা।
এই ঘটনাটি কিন্তু মোটেই একক নয়। জাফর এক্সপ্রেস এর আগেও একাধিকবার জঙ্গি সংগঠনের নিশানায় পড়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসেই বেলুচ লিবারেশন আর্মি (BLA)-র জঙ্গিরা ট্রেনটি হাইজ্যাক করে। সেই ভয়াবহ ঘটনায় ২১ জন যাত্রী এবং ৪ জন নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যু হয়েছিল। পরে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে ৩৩ জন জঙ্গিকে হত্যা করে এবং শতাধিক যাত্রীকে উদ্ধার করে।
কিন্তু হামলার এখানেই ইতি হয়নি। জুন মাসে জ্যাকোবাবাদ এলাকায় বিস্ফোরণে চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়। আগস্টে মাসতুনগ অঞ্চলেও একই রকম হামলায় ছয়টি কোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বহু যাত্রী আহত হন। আগস্ট মাসের শেষ দিকে ট্র্যাক পরীক্ষা করতে পাঠানো একটি পাইলট ইঞ্জিনের উপরেও গুলিবর্ষণ করা হয়, যার দায় স্বীকার করে নেয় BLA।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলির ক্রমবর্ধমান কার্যকলাপ রেলপথসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিন্ধ এবং বেলুচিস্তানে রেললাইন বরাবর বিস্ফোরণ ও নাশকতার সংখ্যা গত কয়েক বছরে ভয়ঙ্করভাবে বেড়েছে।
পাকিস্তান রেলওয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা আহতদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি এবং তদন্ত শুরু হয়েছে। কারা এই বিস্ফোরণের পেছনে রয়েছে তা খুব শীঘ্রই প্রকাশ্যে আসবে।” নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বেলুচিস্তানে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশোধ হিসেবেই এসব হামলা চালানো হচ্ছে।
ঘটনার জেরে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁরা এখন আর জাফর এক্সপ্রেসে চড়ার সাহস পাচ্ছেন না। দেশের ভেতরে রেল নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রেলপথে এমন নাশকতা রোধ করতে হলে কেন্দ্র ও স্থানীয় প্রশাসনকে একযোগে পদক্ষেপ নিতে হবে।
বর্তমানে উদ্ধারকাজ চলছে এবং আহতদের চিকিৎসা চলছে। তবে যতক্ষণ না মূল ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, ততক্ষণ পাকিস্তানের রেলপথ নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।