নেপোলিয়ানের গয়না চুরিতে নয়া বিতর্ক লুভর জাদুঘরে

louvre-jewel-heist-cgi-group-denial

প্যারিস: ফ্রান্সের ঐতিহাসিক লুভর জাদুঘর আবারও শিরোনামে তবে এবার কোনো শিল্পকর্ম নয়, বরং এক চাঞ্চল্যকর রত্নচুরির ঘটনায়। রবিবার রাতে বিশ্বের অন্যতম সুরক্ষিত এই জাদুঘরে ঘটে গিয়েছে এক অভূতপূর্ব ডাকাতি, যেখানে নয়টি অমূল্য জহরত নিখোঁজ হয়ে গেছে। তবে ঘটনায় নতুন মোড় এসেছে সোমবার। লুভর কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলি বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা CGI Group-এর সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে।

Advertisements

ইসরায়েলের তেল আবিব-ভিত্তিক CGI Group দাবি করে, লুভর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তদন্তে সহায়তার জন্য। সংস্থার প্রধান নির্বাহী জ্ভিকা নাভেহ সংবাদ সংস্থা AFP-কে জানান, “লুভর আমাদের অনুরোধ করেছে যাতে আমরা এই চুরিতে জড়িতদের পরিচয় উদঘাটন করি এবং হারানো গয়না উদ্ধার করতে সাহায্য করি।” তিনি আরও বলেন, সংস্থাটি অতীতে ২০১৯ সালে জার্মানির ড্রেসডেনের Green Vault Museum থেকে চুরি হওয়া শিল্পকর্ম উদ্ধার করেছিল যার সাফল্যই নাকি তাদের এই নতুন দায়িত্ব এনে দিয়েছে।

   

স্পোর্টিং ক্লাব দিল্লির দায়িত্ব পেয়ে কী বললেন টমাস?

কিন্তু লুভর কর্তৃপক্ষ সেই দাবি সরাসরি অস্বীকার করেছে। জাদুঘরের এক মুখপাত্র বলেন, “লুভর ম্যানেজমেন্ট এই দাবি অস্বীকার করছে। আমরা কোনো বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করিনি।” তিনি এই বিষয়ে অতিরিক্ত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে, নাভেহ দাবি করেছেন যে যোগাযোগটি সরাসরি নয়, বরং “একজন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে” এসেছে, যিনি নাকি লুভর এবং কিছু বিমা সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। কিন্তু লুভর পরে আবারও তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে জানায় “জাদুঘর কেউকেই কোনোভাবে যোগাযোগ করেনি।”

ফরাসি পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, রবিবার রাতে চোরেরা জাদুঘরের একটি সীমিত প্রবেশাধিকারপ্রাপ্ত গ্যালারিতে ঢুকে নয়টি দামী রত্ন চুরি করে। পালানোর সময় তাদের একজন ভুলবশত একটি হাজারেরও বেশি হীরকখচিত মুকুট ফেলে যায়, যা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

Advertisements

এই ঘটনা শুধু ফ্রান্স নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন তুলেছে। কারণ, লুভর এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশ্বের সেরাদের মধ্যে অন্যতম বলে মনে করা হয়। অথচ এত কড়া সুরক্ষার মধ্যেও এই চুরির ঘটনা ঘটায় প্রশ্ন উঠেছে, নিরাপত্তা ঘাটতি না কি ভিতরের কারও সহযোগিতা?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চুরি ২০১৯ সালের ড্রেসডেন মিউজিয়াম ডাকাতি-র সঙ্গে কিছুটা মিল রয়েছে। সেখানে ১৮ শতকের রত্নভাণ্ডার থেকে প্রায় ১১৩ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের গয়না চুরি হয়েছিল। যদিও পরে সেই চুরির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়, সব গয়না এখনও উদ্ধার হয়নি।

এদিকে, লুভর ব্যবস্থাপনা তাদের বিমা সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে এবং ফরাসি পুলিশের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করছে বলে জানিয়েছে। তবে CGI Group-এর দাবিকে তারা “অসত্য ও বিভ্রান্তিকর প্রচার” বলে উল্লেখ করেছে।

এই ঘটনার পর ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ও বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে। দেশটির সংস্কৃতি মন্ত্রী জানিয়েছেন, “এটি শুধু এক জাদুঘরের ক্ষতি নয়, বরং আমাদের ঐতিহ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর একটি বড় আঘাত।”

প্যারিসের নাগরিকদের মধ্যে এখনো চাঞ্চল্য লুভরের মতো কঠোর নিরাপত্তার জায়গায় কীভাবে এই ধরনের ডাকাতি সম্ভব হলো? পুলিশ সূত্রের দাবি, চোরেরা অত্যন্ত প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ ছিল, এবং তাদের পরিকল্পনা ছিল নিখুঁত। তদন্ত চলছে, তবে চুরি হওয়া রত্নগুলির কোনো সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি।