শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ-নেপালের দেখানো পথে এবার ইতালিতে আন্দোলন

ইতালির মিলান (Milan) শহরে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া এক সহিংস আন্দোলন নতুন করে আন্তর্জাতিক নজর কেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের চলমান ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির…

italy-milan-pro-palestine-protests-violence-september-2025-meloni-government-clashes

ইতালির মিলান (Milan) শহরে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া এক সহিংস আন্দোলন নতুন করে আন্তর্জাতিক নজর কেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের চলমান ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সরকারের প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি না দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।

শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিবাদে সীমাবদ্ধ না থেকে, এই বিক্ষোভ দ্রুত সহিংসতায় রূপ নেয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে—প্রো-প্যালেস্টাইন (প্যালেস্টাইনপন্থী) বিক্ষোভকারীরা, যাদের মধ্যে চরম বামপন্থী গোষ্ঠী ও কিছু অভিবাসী গ্যাংও ছিল, তারা মিলানের রাস্তায় তাণ্ডব চালায়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও রাস্তা অবরোধ করে ফেলে, যার ফলে জনজীবনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে।

   

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি আন্দোলন নয়, বরং এটি ইউরোপের সাম্প্রতিক অভিবাসন ও রাজনৈতিক মতাদর্শের সংঘাতকে প্রকাশ করে। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ইতিপূর্বে নিজ নিজ দেশে কিংবা প্রবাসে অভিবাসীদের মানবাধিকার, রাজনৈতিক স্বীকৃতি ও স্বাধীনতার দাবিতে বিভিন্ন রকমের আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। সেই পথেই যেন হাটছে ইতালির এই নতুন প্রজন্মের অভিবাসী ও বামপন্থী কর্মীরা।

তবে, ইতালির পরিস্থিতি ভিন্ন কারণে আরও স্পর্শকাতর। জর্জিয়া মেলোনির নেতৃত্বাধীন ডানপন্থী সরকার অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সরকার বলছে, প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি দিলে সেটা “সন্ত্রাসের বৈধতা” দেবে। এর ফলে সরকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে গুরুত্ব দিয়ে চলেছে। অন্যদিকে, ফ্রান্স জাতিসংঘে প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি ভিন্ন বার্তা দিয়েছে, যার ফলে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে প্যারিস।

মিলানের আন্দোলনের এই চেহারা শুধুমাত্র প্যালেস্টাইন ইস্যু নয়, বরং এটি অভিবাসী সমাজের রাজনৈতিক ভূমিকা, বর্ণ বৈষম্য এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকের দূরত্বের প্রতিচ্ছবি। ইতালিতে বেড়ে চলা মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় অভিবাসী জনসংখ্যা বর্তমানে এক নতুন রাজনৈতিক শক্তিতে রূপ নিচ্ছে। তারা নিজেদের দাবি ও অধিকার আদায়ে এখন আর নিরব নয়।

Advertisements

বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার মতো দেশে জন্ম নেয়া আন্দোলনের চেতনা ও কৌশল প্রবাসে গিয়ে নতুন রূপ নিচ্ছে। বাংলাদেশে যেমন শিক্ষার্থীরা বা গার্মেন্টস শ্রমিকরা নিজেদের অধিকার আদায়ে রাস্তায় নামেন, সেভাবেই ইউরোপে প্রবাসীরা এখন নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে সোচ্চার হচ্ছেন।

এই আন্দোলন ভবিষ্যতে ইতালির রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে। তবে এখনই স্পষ্ট যে, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের ‘রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ’ কৌশল ইতালিতেও ছড়িয়ে পড়ছে—এবং তাতে ইউরোপীয় রাজনীতির ভারসাম্য নড়বড়ে হয়ে উঠছে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News