ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলতে থাকা ইসরায়েলি আগ্রাসনের আরেকটি নৃশংস অধ্যায় যুক্ত হল (Israeli Missile)। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে বোমা হামলা চালিয়ে গাজা শহরের পূর্বাঞ্চলীয় তুফাহ (তুফফা) এলাকায় অবস্থিত আল-আয়বাকি মসজিদটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এই মসজিদটি ১৩শ শতাব্দীর শেষভাগে নির্মিত, যা প্রায় ৭৫০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক স্থাপত্য। হামলায় মসজিদের মিনারসহ সমস্ত কাঠামো গুড়িয়ে যায়, এবং এতে কোনো নিহতের খবর না পাওয়া গেলেও, এলাকার বাসিন্দিরা ভয়ে কাঁপছেন।
গাজার স্থানীয় সংবাদ সূত্র এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী বিকেলের দিকে তুফাহ এলাকায় একাধিক বোমা হামলা চালায়। আল-আয়বাকি মসজিদটি এলাকার একটি প্রধান ধর্মীয় কেন্দ্র ছিল। যেখানে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায় নামাজ পড়তেন এবং সমাজসেবামূলক কাজকর্ম চালাতেন।
মসজিদের ইতিহাস ১৩শ শতকের মামলুক যুগের সাথে যুক্ত, এবং এটি গাজার ইসলামী স্থাপত্যের একটি জীবন্ত নিদর্শন। হামলার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা ছবি এবং ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মসজিদের মিনারটি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে এবং চারপাশের দেয়ালগুলো ধসে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, হামলার সময় মসজিদটি খালি ছিল, কিন্তু এলাকায় বাস্তুচ্যুত পরিবারের লোকজন থাকতেন। কোনো আগাম সতর্কীকরণ ছাড়াই চালানো এই হামলা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) এখনো এই নির্দিষ্ট হামলা নিয়ে কোনো অফিসিয়াল বিবৃতি দেয়নি। তবে, অতীতের ঘটনার মতো তারা দাবি করে যে, এমন ধর্মীয় স্থাপনাগুলো হামাসের সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত সরকারি মিডিয়া অফিস এই দাবিকে খারিজ করে বলেছে, আল-আয়বাকি মসজিদ কখনো সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হয়নি।
তাদের মতে এটি ছিল একটি শান্তিপূর্ণ উপাসনালয়, যা স্থানীয়দের জন্য আধ্যাত্মিক আশ্রয়স্থল। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো, যেমন ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর এবং ইউএন, এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। রাষ্ট্রসংঘের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে গাজায় ১,২৩০টি মসজিদের মধ্যে ১,০০০টিরও বেশি ধ্বংস হয়েছে, যার পুনর্নির্মাণ খরচ প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার। এই ধ্বংসযজ্ঞ ফিলিস্তিনিদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা বলে অভিযোগ উঠেছে।
তুফাহ এলাকা গাজা শহরের একটি ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখানে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এই এলাকায় ইসরায়েলি হামলা নিয়মিত ঘটছে, যা সিভিলিয়ানদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে। গত জুন মাসে (২০২৪) তুফাহ এলাকায় একটি হামলায় ১৮ জন নিহত হয়েছিলেন। আল-আয়বাকি মসজিদের ধ্বংস এই ধারাবাহিকতার অংশ।
বিহার থেকে বাংলা, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন কমিশনের
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা জানিয়েছে, হামলার পর ধ্বংসস্তূপে অনুসন্ধান চালিয়ে কোনো মৃতদেহ পাওয়া যায়নি, কিন্তু চারপাশের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, “এই মসজিদ আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি বহন করত। ইসরায়েল শুধু আমাদের জীবন নয়, আমাদের ইতিহাসকেও নিশ্চিহ্ন করছে।” একজন স্থানীয় বাসিন্দা আল জাজিরাকে বলেন, হামলার শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠল, এবং ধুলোবালির মধ্যে সবাই ভয়ে লুকিয়ে পড়ল।