গাজা: নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত। রবিবার ইসরায়েলের পরপর বিমান হামলায় মধ্য গাজার একাধিক এলাকায় অন্তত ১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও চিকিৎসকরা। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন হামাসের জাবালিয়া ব্যাটালিয়নের এলিট ইউনিটের কমান্ডার ইয়াহিয়া আল-মাবহুহ।
আল-আকসা হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, অন্তত নয়টি মৃতদেহ এবং একাধিক আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। হামলার স্থান ছিল আল-জাওয়াইদা সমুদ্রতীরবর্তী একটি শান্ত শহর, যেখানে একটি ছোট তাঁবু-ঘেরা সৈকত ক্যাফে, দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিসের মাঝখানে অবস্থিত। এছাড়াও, নুসিরাত শরণার্থী শিবিরের একটি ভবনও লক্ষ্য করে বোমা বর্ষণ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, “রাতের আকাশে আগুনের বল ছুটে যেতে দেখা যায়। বিশাল বিস্ফোরণ এবং ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়িয়ে পড়ে গোটা উপকূলে।” বিস্ফোরণের তীব্রতায় পাশের ভবনগুলিও কেঁপে ওঠে। পরে উদ্ধারকারী দল ও অ্যাম্বুল্যান্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, আল-জাওয়াইদার ওই ক্যাফের ভিতরে তখন হামাসের আল-কাসসাম ব্রিগেডের কয়েকজন সদস্য বৈঠক করছিলেন। ঠিক সেই সময় ইসরায়েলি বিমান বাহিনী তাদের নিশানা করে হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ইয়াহিয়া আল-মাবহুহ, যিনি হামাসের অন্যতম শীর্ষ ফিল্ড কমান্ডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
আল-মাবহুহর মৃত্যু হামাসের জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গাজার উত্তরাঞ্চলের সামরিক কাঠামো গড়ে তুলতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে জাবালিয়া ব্যাটালিয়ন গত বছর সংঘাতে ইসরায়েলি ট্যাংক এবং সাঁজোয়া যানবাহনের বিরুদ্ধে একাধিক হামলা চালিয়েছিল।
হামলার পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (IDF) তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়, “আমরা হামাসের সামরিক কমান্ড কাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করছি। যারা ইসরায়েলি নাগরিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালিয়েছে, তাদের নিরাপদ আশ্রয় গাজায় আর নেই।”
অন্যদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৭০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ, যাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আল-আকসা হাসপাতালে চিকিৎসকদের পর্যাপ্ত ওষুধ ও অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
হামলার সময়ের কিছু ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, সমুদ্রতীরের দিকে ধেয়ে আসছে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরে আগুনে পুড়ে যাচ্ছে তাঁবু ও কাঠের কাঠামো। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, “বিস্ফোরণের পরপরই মাটিতে আগুনের গোলা ছড়িয়ে পড়ে, আমাদের কেউ বাঁচার সময়ই পাইনি।”
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আবারও ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। তুরস্ক, কাতার ও জর্ডান সরকার গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদও নতুন করে সংঘর্ষ এড়িয়ে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে।
যদিও ইসরায়েল দাবি করছে, তারা শুধু “জঙ্গি ঘাঁটি” লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে, মানবাধিকার সংগঠনগুলির মতে, গাজার সাধারণ মানুষ এই সংঘাতের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। শিশু ও মহিলাদের মৃত্যুহারও ক্রমশ বাড়ছে। গাজা উপত্যকায় আবারও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই বিমান হামলা হয়তো নাজুক অস্ত্রবিরতির ভিত্তিকে আরও দুর্বল করে দেবে এবং সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।