পাকিস্তানে অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে খতম ISIS কমান্ডার বুরহান

isis-khorasan-commander-burhan-killed-in-punjab-patak-report

পাকিস্তানের (Pakistan) পাঞ্জাব প্রদেশের আখতারাবাদ শহরের পাতাক এলাকায় অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের হামলায় আইএসআইএস খোরাসান (ISKP)-এর সিনিয়র কমান্ডার বুরহান নিহত হয়েছে বলে একাধিক আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক সূত্র দাবি করেছে। বুরহান, যিনি ‘জায়েদ’ নামেও পরিচিত ছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে আইএসআইএস খোরাসানের অন্যতম সক্রিয় অপারেশনাল সদস্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

Advertisements

ঘটনাস্থলের তথ্য অনুযায়ী, পাতাক এলাকার একটি রাস্তায় মোটরসাইকেল আরোহী অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা টার্গেটেড শুটিংয়ের মাধ্যমে ওই কমান্ডারকে গুলি করে। হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায়। পাকিস্তানের স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকা ঘিরে ফেলে এবং তদন্ত শুরু করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

   

আইএসআইএস খোরাসানে বুরহানের ভূমিকা

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের তথ্যমতে, বুরহান আইএসআইএস খোরাসান শাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুখ ছিল। তিনি ক্বারী ফাতেহ এবং আবু বকর নামের দুই শীর্ষ আইএসআইএস খোরাসান নেতার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সংগঠনের ‘তেমকিন পর্যায়ে’ তাঁর বড় ভূমিকা ছিল বলে দাবি উঠেছে—এই পর্যায়টি মূলত সংগঠনের বিস্তার, প্রভাব প্রতিষ্ঠা এবং নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি সংক্রান্ত অপারেশন কেন্দ্রিক।

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে আইএসআইএস খোরাসান যেসব বড় পদক্ষেপ নিয়েছিল, তার কিছু অংশের সঙ্গেও বুরহানের সম্পৃক্ততা ছিল বলে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদ পর্যবেক্ষক সংগঠন উল্লেখ করেছে। যদিও পাকিস্তান সরকার বা সেনাবাহিনী এখনো তাঁর পরিচয় বা সংগঠনে ভূমিকা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।

ঘটনার পর নিরাপত্তা পর্যবেক্ষকদের প্রতিক্রিয়া

বুরহানের নিহত হওয়ার ঘটনাকে অনেক বিশ্লেষক আইএসআইএস খোরাসানের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কারণ তিনি কেবল অপারেশনাল দায়িত্বই পালন করতেন না, বরং বিভিন্ন অঞ্চলের মিলিট্যান্ট নেটওয়ার্কের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন।

কিছু পর্যবেক্ষকের মতে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সক্রিয় আইএসআইএস খোরাসান নেটওয়ার্ককে দুর্বল করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে পারে। তবে অপর কিছু নিরাপত্তা বিশ্লেষক সতর্ক করে বলেন,
“কোনো নেতার মৃত্যু ISKP-এর কার্যক্রমকে সাময়িকভাবে দুর্বল করতে পারে বটে, তবে সংগঠনটি যে বিকেন্দ্রীভূত কাঠামোয় পরিচালিত হয়, তাতে দ্রুতই নতুন নেতৃত্ব উঠে আসার সম্ভাবনা থাকে।”

পাকিস্তানে আইএসআইএস খোরাসানের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন

গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে আইএসআইএস খোরাসান জঙ্গির নাম উঠে এসেছে। পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তান—এই তিন প্রদেশে বিভিন্ন চক্রের সঙ্গে তাদের যোগ থাকার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনাও সেই প্রশ্নকে নতুন করে সামনে এনেছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান— “আমরা ঘটনাটি গভীরভাবে তদন্ত করছি। নিহত ব্যক্তি কার সাথে যুক্ত ছিল, তার নেটওয়ার্ক কীভাবে কাজ করত—সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

Advertisements
স্থানীয় পরিস্থিতি এবং তদন্তের অগ্রগতি

হামলার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্থানীয় পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, ঘটনাস্থলের CCTV ফুটেজ পরীক্ষা করা হচ্ছে, পাশাপাশি প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান—“হামলাটি অত্যন্ত পরিকল্পিত। লক্ষ্যবস্তু নিশ্চিত করে গুলি করা হয়েছে, যা পেশাদার হামলার ইঙ্গিত দেয়।”

পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি নেটওয়ার্ক নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে পাকিস্তানভিত্তিক ISKP নেটওয়ার্কের সক্রিয়তা এবং অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকার জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির মধ্যে টার্গেট কিলিং অস্বাভাবিক নয়। তবে পাঞ্জাব প্রদেশে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি নিরাপত্তা সংস্থাগুলির জন্য উদ্বেগের কারণ।

এশিয়া-কেন্দ্রিক সন্ত্রাসবাদ-বিশেষজ্ঞ ড. হামিদ বলেন— “আফগানিস্তানে চাপ বাড়ার পর অনেক জঙ্গি পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ টার্গেটেড কিলিং বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি বৃহত্তর নিরাপত্তাহীনতার ইঙ্গিত।”

বুরহানের মৃত্যুর মাধ্যমে আইএসআইএস খোরাসানের পাকিস্তান শাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে হারাল—এটি স্পষ্ট। তবে ঘটনার দায় কারা নিয়েছে বা এটি অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নাকি বাহ্যিক গোয়েন্দা অপারেশন—তা এখনো পরিষ্কার নয়। পাকিস্তান নিরাপত্তা বাহিনী তদন্ত চালাচ্ছে, এবং চূড়ান্ত তথ্য প্রকাশে আরো সময় লাগবে।