সিনেমার চিত্রনাট্যকে হার মানাবে অপারেশন ‘মহান’, কিভাবে হল বিমান পাচার জানুন

সমগ্র বিশ্বে এবার সাড়া ফেলে দেওয়ার মতো কাজ করলে ইরান (Iran)। এতদিন হয়তো আপনি নিশ্চয়ই সোনা পাচার, হিরে পাচার বা স্মাগলিঙের কথা জেনে বা শুনে…

সমগ্র বিশ্বে এবার সাড়া ফেলে দেওয়ার মতো কাজ করলে ইরান (Iran)। এতদিন হয়তো আপনি নিশ্চয়ই সোনা পাচার, হিরে পাচার বা স্মাগলিঙের কথা জেনে বা শুনে থাকবেন নিশ্চয়ই। কিন্তু কখনো শুনেছেন বিমান স্মাগলিঙের কথা? তাও কিনা আবার দু-দুটি বিমানের? কিন্তু এমনটাই করে দেখিয়েছে ইরান। আর ইরানের এই কাজ দেখে রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে গেছে আমেরিকা সহ পশ্চিমী দেশগুলি।

ইরান একটি বিশেষ ধরনের অপারেশন চালিয়েছিল যার নাম হল ‘মহান’। ইরান যে তলে তলে বড় কিছু করার ছক কষছিল সেটা হয়তো স্বপ্নেও কেউ কল্পনা করতে পারেনি। আসলে মূল গল্পটা শুরু হয়েছিল ইউরোপের দেশ লিথুয়ানিয়া থেকে। এখানকার তিনটি এয়ারবেস থেকে  এ৩৪০ কেনার চুক্তি হয়। এই তিনটি বিমান আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার ম্যাকা ইনভেস্টের একটি কোম্পানির, যারা ভাড়ায় বিমান সরবরাহ করে। লিথুয়ানিয়া সরকারের তদন্ত অনুযায়ী, ইরান রেভল্যুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) সঙ্গে যুক্ত একটি কোম্পানি তাদের পরিচয় পরিবর্তন করে এই তিনটি বিমান নিয়ে কাজ করে।

   

চুক্তি অনুযায়ী শ্রীলঙ্কায় একটি বিমান ও ফিলিপাইনে দুটি বিমান পাচারের কথা হয়। আফ্রিকান কোম্পানি মাকা ইনভেস্ট দুটি বিমানকে লিথুয়ানিয়ার সিয়াউলিয়াই বিমানবন্দর থেকে শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। লিথুয়ানিয়ার এয়ার ট্র্যাপ কন্ট্রোলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, একটি বিমান শ্রীলঙ্কা ও অন্যটি ফিলিপাইনে যাচ্ছে। তৃতীয় বিমানটি সিয়াউলিয়াই বিমানবন্দরে রয়ে গেছে।

এরপর লিথুয়ানিয়ার আকাশসীমা থেকে উড়ে দুটি বিমানই ইরানের আকাশসীমায় পৌঁছায় এবং তারপর উভয় বিমানের ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ দুটি বিমানই সব ধরনের রাডার ও নেভিগেশন থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। লিথুয়ানিয়া সরকার মনে করছে, বিমান দুটি নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছে গেছে, তবে তাদের গন্তব্য শ্রীলঙ্কা বা ফিলিপাইন নয়, ইরান।

একটি বিমান তেহরানে এবং অন্যটি চাবাহারে অবতরণ করে। তৃতীয় এয়ারবাস এ৩৪০ও ইরানে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত, তবে ততক্ষণে বিষয়টি সকলের সামনে উঠে এসেছে। এরপরেই তড়িঘড়ি তৃতীয় বিমানটি থামিয়ে দেয় লিথুয়ানিয়া সরকার। বিমান দুটি ইরানের বিমান সংস্থা মাহান এয়ারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে ইরানের ওপর আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানি এয়ারলাইন্সের বিমানের ঘাটতি রয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ইরানের প্রায় ৪০০ বিমানের প্রয়োজন। ইরান চাইলেও কোনো বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিমান বা হেলিকপ্টার কিনতে পারে না। শর্তটি হলো, ইরানে উপস্থিত অনেক বিমানই যন্ত্রাংশের অভাবে উড়তে পারছে না। এক বিমানের যন্ত্রাংশ সরিয়ে অন্য বিমানে বসানো হয়। বিমানের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে ইরান এখন চোরাচালানের মাধ্যমে হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ।

লিথুয়ানিয়া বলছে, তাদের আকাশসীমার জন্য ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণরূপে দায়ী। লিথুয়ানিয়া ছাড়ার পর বিমানটির কী হবে বা বিমানটি কোথায় যাবে সে বিষয়ে লিথুয়ানিয়া সরকার কিছুই করতে পারছে না। আফ্রিকান কোম্পানির তৃতীয় বিমানটি থামানো হয়েছে কারণ তদন্ত সংস্থার মতে, এটিও ইরানে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। লিথুয়ানিয়াও ইরানের এই অভিযানের তথ্য দিয়েছে। যদিও সমগ্র ঘটনাটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটেছিল এবং এখনই এটি প্রকাশ্যে এসেছে।