খামেনির উত্তরসূরি তৈরী, তবে এখনই খামেনি বধ নয় জানাল ইসরায়েল

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলতে থাকা তীব্র সংঘাতের মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি,(Khamenei) যিনি বর্তমানে একটি গোপন বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে,…

Khamenei on war

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলতে থাকা তীব্র সংঘাতের মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি,(Khamenei) যিনি বর্তমানে একটি গোপন বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে, তাঁর মৃত্যুর ক্ষেত্রে সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী হিসেবে তিনজন সিনিয়র ধর্মীয় নেতাকে মনোনয়ন করেছেন।

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানি কর্মকর্তাদের সূত্র মারফত জানা গেছে, খামেনি(Khamenei) ইসরায়েলি হামলায় নিহত সামরিক কমান্ডারদের জন্যও প্রতিস্থাপন নিয়োগ শুরু করেছেন। এই পদক্ষেপ ইরানের ইসলামিক রিপাবলিকের স্থিতিশীলতা এবং খামেনির উত্তরাধিকার সুরক্ষিত করার জন্য গৃহীত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

   

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ খামেনির (Khamenei) বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। কাটজ এমনকি খামেনির পরিণতি ইরাকের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেনের মতো হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন। এই হুমকির প্রেক্ষিতে খামেনি অ্যাসেম্বলি অফ এক্সপার্টসকে—ইরানের পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচনের জন্য দায়ী ধর্মীয় সংস্থা—তাঁর প্রস্তাবিত তিনজন প্রার্থীর মধ্যে থেকে দ্রুত উত্তরাধিকারী নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছেন।

সাধারণত, নতুন সর্বোচ্চ নেতা নিয়োগের প্রক্রিয়া মাসব্যাপী আলোচনা এবং একাধিক প্রার্থীর মূল্যায়নের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। কিন্তু বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে খামেনি দ্রুত এবং নিয়ন্ত্রিত উত্তরণ নিশ্চিত করতে চান, যাতে রাষ্ট্র এবং তাঁর উত্তরাধিকার সুরক্ষিত থাকে।

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খামেনির ছেলে মোজতাবা খামেনি এই তিনজন সিনিয়র ধর্মীয় নেতার তালিকায় নেই, যা পূর্বের ধারণার বিপরীত, যেখানে মোজতাবাকে উত্তরাধিকারের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে মনে করা হয়েছিল।

ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খামেনি (Khamenei) ইসরায়েল বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নিহত হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতন এবং এমন মৃত্যুকে তিনি শাহাদাত হিসেবে বিবেচনা করবেন। এই প্রেক্ষাপটে, তিনি তাঁর নিরাপত্তার জন্য ইলেকট্রনিক যোগাযোগ বন্ধ করে একজন বিশ্বস্ত সহযোগীর মাধ্যমে সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরান বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপক ভালি নাসরের মতে, বর্তমানে ইরানের প্রধান অগ্রাধিকার হলো রাষ্ট্রের সংরক্ষণ। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের সংরক্ষণই এখন শীর্ষ অগ্রাধিকার।” খামেনির এই পদক্ষেপ ইসলামিক রিপাবলিকের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য গৃহীত একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইসরায়েলের চলমান হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে, যার মধ্যে রেভল্যুশনারি গার্ডসের কমান্ডার-ইন-চিফ হোসেইন সালামি, ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রোগ্রামের প্রধান আমির আলি হাজিজাদেহ এবং গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি নিহত হয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডগুলো খামেনির ঘনিষ্ঠ বৃত্তে বড় ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে বলেছেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা খামেনির (Khamenei) সঠিক অবস্থান জানে এবং তিনি একটি সহজ লক্ষ্য, তবে বর্তমানে তাঁকে হত্যার কোনো পরিকল্পনা নেই।

Advertisements

ট্রাম্প বলেন, “আমরা ঠিক জানি তথাকথিত ‘সর্বোচ্চ নেতা’ কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি একটি সহজ লক্ষ্য, তবে তিনি সেখানে নিরাপদ। আমরা তাঁকে হত্যা করতে যাচ্ছি না, অন্তত এখন নয়।” তবে, তিনি ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ না করলে তাঁর ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করবে।

ইসরায়েলের (Khamenei) হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে খামেনি ইরানের জনগণকে একত্রিত হওয়ার এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “ইরানের জনগণ ভয় পায় না এবং হুমকির ভাষায় তাদের সঙ্গে কথা বলা উচিত নয়।” তিনি ইসরায়েলের হামলাকে “জঘন্য অপরাধ” হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, ইসরায়েলকে এর জন্য কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

তবে, ইরানের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে, যা ইসরায়েলে বেসামরিক জনগণের মধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছে। ইরানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত অস্থিতিশীল। ইসরায়েলের হামলায় তেহরানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময়কার ক্ষতির চেয়েও বেশি।

ইরানের(Khamenei)  সামরিক ও পারমাণবিক পরিকাঠামোর উপর ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু হামলা দেশটির প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে দুর্বল করেছে। এই পরিস্থিতিতে খামেনির উত্তরাধিকার প্রশ্নটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অ্যাসেম্বলি অফ এক্সপার্টস, যারা ৮৮ জন সিনিয়র ধর্মীয় নেতার সমন্বয়ে গঠিত, গোপন বৈঠকে প্রার্থীদের ধর্মীয় যোগ্যতা, রাজনৈতিক আনুগত্য এবং রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষমতা মূল্যায়ন করবে।

চতুর্থ ত্রৈমাসিকে স্থিতিশীল ঘরের দাম বৃদ্ধি, জানাল RBI

ইসরায়েলের দাবি, তাদের হামলার লক্ষ্য ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা ধ্বংস করা এবং দেশটির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করা। নেতানিয়াহু বলেছেন, “ইরানের পারমাণবিক হুমকি ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি।” তবে, ইরান দাবি করেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে। এই দ্বন্দ্ব মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

খামেনির (Khamenei) সম্ভাব্য মৃত্যু ইরানের রাজনৈতিক ও সামরিক কাঠামোতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তাঁর তিন দশকের শাসনকালে তিনি ইসলামিক রিপাবলিককে একটি আঞ্চলিক শক্তিতে রূপান্তরিত করেছেন। তবে, বর্তমান যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ চাপ তাঁর শাসনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন নেতার নির্বাচন এবং রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নির্ভর করবে অ্যাসেম্বলি অফ এক্সপার্টসের সিদ্ধান্ত এবং ইরানের জনগণের প্রতিক্রিয়ার উপর।

এই ঘটনা বিশ্ব রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই সংঘাত নিরসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে তা এখনও সফল হয়নি। ইরানের ভবিষ্যৎ এবং মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি এখন খামেনির উত্তরাধিকার এবং ইসরায়েলের সামরিক কৌশলের উপর নির্ভর করছে।