মাস্ক ছাড়া ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি, ৫ লক্ষ মানুষ শ্বাসকষ্টে হাঁফাচ্ছেন

জাকার্তায় রাস্তায় মানুষের মুখে আবারও মাস্ক। তবে এবার আর করোনা ভাইরাসের জন্য নয়। এই মাস্ক বায়ুদূষণ থেকে সুরক্ষার জন্য। বায়ু দূষণের মাত্রা এমন অবস্থায় পৌঁছেছে…

জাকার্তায় রাস্তায় মানুষের মুখে আবারও মাস্ক। তবে এবার আর করোনা ভাইরাসের জন্য নয়। এই মাস্ক বায়ুদূষণ থেকে সুরক্ষার জন্য। বায়ু দূষণের মাত্রা এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, জাকার্তা পৃথিবীর অন্যতম দূষিত শহরের একটির তকমা পেয়েছে। এতে বাসিন্দাদের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে।

সতী দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তার শ্বাসকষ্ট অসহনীয় হয়ে উঠেছে। ডাক্তাররা তাকে বলেছেন, দূষিত বায়ুর কারণে এটি হয়েছে। সতী জানাচ্ছেন, “আমার ভয় হয়, আশেপাশে সহযোগিতা করার মতো কেউ না থাকার কারণে আমি মারা যাব। সম্প্রতি আমার শ্বাসকষ্টের অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এটি খুব যন্ত্রণাদায়ক। মাঝেমধ্যে আমার নিজেকেই এই পরিস্থিতি সামলাতে হয়। কারণ আমি একা একা হাসপাতালে যেতে পারি না। “জাকার্তার অনেক শ্বাসকষ্টের রোগীর একজন ৫৭ বছরের এই বাসিন্দা

শহরে শুধুমাত্র চলতি বছরে ৫ লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। ‌রোগীর সংখ্যা এবং রোগের ভয়াবহতা দুই দিক দিয়েই সম্প্রতি ফুসফুসের রোগ উল্লেখ্যযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অ্যাজমা এবং দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগে রোগীর যারা শুধুমাত্র চেকআপ করাতো। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা কাশি এবং তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসছে। এর সাথে বায়ুদূষণের সম্পর্ক রয়েছে।

রাষ্ট্রপতি জোকো উইডোডো নিজেও আক্রান্ত। কয়েক সপ্তাহ কাশির সমস্যায় ভোগার পরে ‌শহরের দূষণ রোধে জরুরি পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। রাস্তায় ট্র্যাফিক কমানোর জন্য চাকরিজীবীদের ঘর থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে। জনগণকে সাইকেল অথবা গণপরিবহন ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে সমালোচকরা বলেছেন শুধুমাত্র গাড়ি ব্যবহারই এই পরিস্থিতির একমাত্র কারণ নয়। তারা শহরের চারপাশে নির্মিত ১৬ টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে দায়ী করেছেন। বায়ু দূষণের কারণ যেটিই হোক না কেন ‌এখানে বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিশুদ্ধ বাতাসের অধিকার আসলে একটি রাজনৈতিক বিষয়। দুই বছর আগে সরকারের বিরুদ্ধে বায়ু দূষণ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় জনগণের পক্ষে রায় দিয়েছিল আদালত। ইন্দোনেশিয়ার ফোরাম ফর দ্য এনভায়রনমেন্ট নামে মামলাটি দায়ের করে। রাজধানীর বায়ুদূষণ ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে এনজিওটি। ‌২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে জাকার্তার জ্বালানির চাহিদা মারাত্মকভাবে বাড়বে‌।‌ দুর্ভাগ্যবশত, এই নতুন বর্ধিত চাহিদা পূরণ করার জন্য এখানে কোনো ‌নির্ভরযোগ্য বিকল্প নেই। তাই বাড়ি, ‌শিল্প কারখানার জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্য আরও বহুদিন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে।

রাজধানীকে বর্ণিওতে স্থানান্তরিত করার একটা সমাধান বলেছেন রাষ্ট্রপতি। তবে যে মানুষগুলো এখানে থেকে যাবে তাদের জন্য এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। সমালোচকরা বলছে, যুগান্তকারী কোন পদক্ষেপ নেওয়া না হলে জাকার্তার মানুষদের ভোগান্তি কমবেনা।