ইসলামাবাদ: ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন নতুন মোড় নিয়েছে। ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মীদের উপর নিত্যপ্রয়োজনীয় সুবিধায় ‘টার্গেটেড’ বিধিনিষেধ জারি করেছে পাকিস্তান, যা নয়াদিল্লির শীর্ষ সরকারি সূত্রের ভাষায় “ইচ্ছাকৃত, পরিকল্পিত এবং ভিয়েনা কনভেনশনের স্পষ্ট লঙ্ঘন”।
শীর্ষ সূত্রের দাবি, এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর পরিকল্পিত প্রতিশোধমূলক অভিযানের অংশ, যার লক্ষ্য ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিকদের জীবনযাপন ও কাজের পরিবেশ ব্যাহত করা (india Pakistan diplomatic row)।
গ্যাস ও রান্নার জ্বালানিতে বাধা
সূত্র অনুযায়ী, পাকিস্তানের স্যুই নর্দার্ন গ্যাস পাইপলাইনস লিমিটেড (SNGPL) হাইকমিশন প্রাঙ্গণে পাইপলাইন স্থাপন করলেও গ্যাস সরবরাহ ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। স্থানীয় সিলিন্ডার বিক্রেতাদেরও ভারতীয় কূটনীতিকদের কাছে রান্না ও গরমের জন্য জ্বালানি বিক্রি না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে হাইকমিশনের কর্মী ও তাঁদের পরিবার বাজার থেকে দুষ্প্রাপ্য ও ব্যয়বহুল বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন, অনেক সময় তাও মিলছে না।
পানীয় জল ও সংবাদপত্র সরবরাহ বন্ধ
শুধু জ্বালানি নয়, পরিষ্কার পানীয় জলের সরবরাহও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হাইকমিশনের চুক্তিবদ্ধ জল সরবরাহকারীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এবং ইসলামাবাদের অন্যান্য বিক্রেতাদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন তাঁরা মিনারেল ওয়াটার সরবরাহ না করেন। স্থানীয় কলের জল পর্যাপ্ত পরিশোধন ছাড়া পানযোগ্য নয় বলে কূটনীতিক ও তাঁদের পরিবারকে চরম অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।
একইসঙ্গে, সংবাদপত্র বিক্রেতাদের হাইকমিশনে কোনও প্রকাশনা সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় কর্মকর্তাদের মতে, এটি কূটনীতিকদের স্থানীয় সংবাদ ও রাজনৈতিক বিবর্তন থেকে বিচ্ছিন্ন করার একটি সচেতন প্রচেষ্টা।
ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, এই ধরনের পদক্ষেপ কেবল ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশনস-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন নয়, যা দূতাবাসের নির্বিঘ্ন কার্যক্রম এবং কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করে, বরং এটি ভারত–পাকিস্তান সম্পর্কের ভঙ্গুর কাঠামোকেও আরও দুর্বল করছে। নয়াদিল্লির মতে, সরাসরি আলোচনায় না গিয়ে ইসলামাবাদের দীর্ঘদিনের অপ্রচলিত চাপ প্রয়োগের কৌশলেরই এই সম্প্রসারণ।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা ও বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কোনও উচ্চপর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়নি। সাম্প্রতিক মাসগুলিতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয় ভারতীয় সেনার সফল ‘অপারেশন সিন্ধুর’ মাধ্যমে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বড় ধাক্কা দেওয়ার পর এবং ভারত কর্তৃক সিন্ধু জল চুক্তির প্রয়োগে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার পর।