কাশ্মীর পাকিস্তানের? ইসরায়েলের পোস্টে বিতর্ক, চাপে পরে ক্ষমা IDF-এর

মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রধান শত্রু ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলা সংঘাতের প্রেক্ষিতে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ভারতের মানচিত্র বিকৃতভাবে প্রকাশ করে বিতর্কে জড়াল ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী…

india map controversy idf

মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রধান শত্রু ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলা সংঘাতের প্রেক্ষিতে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ভারতের মানচিত্র বিকৃতভাবে প্রকাশ করে বিতর্কে জড়াল ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF)। ভুল মানচিত্রে জম্মু ও কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত অংশ হিসেবে দেখানো হয়। ঘটনাটি ভারতের জনগণের মধ্যে প্রবল ক্ষোভের জন্ম দেয়, বিশেষ করে সেই সময়ে যখন ভারত ও ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক ইতিহাসের সেরা পর্যায়ে রয়েছে।

কী ঘটেছিল?

শুক্রবার রাতে X (পূর্বতন টুইটার)-এ একটি পোস্ট করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। পোস্টটির উদ্দেশ্য ছিল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানকে “বিশ্বের জন্য হুমকি” হিসেবে তুলে ধরা। পোস্টের সঙ্গে থাকা একটি গ্রাফিকসে ইরান থেকে রেডিয়াল সার্কেলের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রের পরিসীমা দেখানো হয়, যাতে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার কয়েকটি দেশ চিহ্নিত ছিল- including India.

   

কিন্তু মানচিত্রে ভারতের সীমান্ত ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। জম্মু ও কাশ্মীর, এবং লাদাখ অঞ্চলকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত না দেখিয়ে কার্যত পাকিস্তানের অংশ হিসেবে দেখানো হয়। মুহূর্তেই ভারতীয় নেটিজেনদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

ভারতীয় প্রতিক্রিয়া india map controversy idf

একাধিক ভারতীয় এক্স ইউজার পোস্টটির বিরুদ্ধে সরব হন। “Indian Right Wing Community” নামে একটি অ্যাকাউন্ট IDF-এর ট্যাগ করে সরাসরি বলেন, “এখন বুঝতে পারছেন কেন ভারত নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকে? কূটনীতি এমন এক খেলা যেখানে সত্যিকারের বন্ধু বলে কিছু নেই।”

ঘটনার মাত্র ৯০ মিনিটের মধ্যেই IDF ওই একই পোস্টের জবাবে ক্ষমা চেয়ে বলে, “এই মানচিত্রটি কেবল একটি ভৌগলিক চিত্রায়ন। এটি সুনির্দিষ্ট সীমান্ত উপস্থাপন করে না। যদি কারও অনুভূতিতে আঘাত লেগে থাকে, আমরা দুঃখিত।” তবে অনেকেই শুধু ক্ষমা নয়, পোস্টটি মুছে দিয়ে সঠিক মানচিত্র দিয়ে আবার আপলোডের দাবি জানান।

 ভারতের ভূখণ্ড নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান

ভারত সরকার বহুবার জানিয়ে দিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ, এমনকি পাকিস্তান ও চীনের দখলে থাকা অঞ্চলও ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সম্প্রতি পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলা ও ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দৃঢ়ভাবে সেই বার্তা দেন।

ভারতীয় কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে—একজন ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক মিত্র কীভাবে এমন একটি গাফিলতি করতে পারে, যেখানে ভারতের ভূখণ্ডের সার্বভৌমতা প্রশ্নের মুখে পড়ে।

ভারত-ইসরায়েল সম্পর্কের প্রেক্ষাপট

এই ঘটনার তাৎপর্য আরও গভীর, কারণ ভারত ও ইসরায়েল গত এক দশকে কৃষি, প্রতিরক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা, প্রযুক্তি ও বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইসরায়েল সফর করেন। সেই সফরের পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর হয়। বর্তমানে ভারত ইসরায়েলের শীর্ষ ৫ বাণিজ্যিক অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে এবং দেশটি ইসরায়েলের অন্যতম বৃহৎ অস্ত্র ক্রেতা।

Advertisements

তাই এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর এই কার্টোগ্রাফিক (মানচিত্র-সংক্রান্ত) ভুল শুধু কূটনৈতিক নয়, জনমতের ক্ষেত্রেও মারাত্মক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

 রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও উঠছে

ঘটনার পর কংগ্রেস নেতা পবন খেরা বলেন, “সরকার যখন একটি দেশের সঙ্গে এতটা ঘনিষ্ঠ হয়, তখন তাদের থেকে এমন গাফিলতি আমাদের পররাষ্ট্রনীতির পরিণতির বিষয়টি স্পষ্ট করে দেয়। আমাদের প্রভাব কোথায়?”

ভারত সরকার এখনো এই বিতর্কে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি, তবে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে বিতর্ক

উল্লেখযোগ্য যে, এই ভুল মানচিত্র প্রকাশিত হয় এমন এক সময়, যখন ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। ১৩ জুন, ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ চালায়, যেখানে ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনা সহ একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান ১৫০টির বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়ে তেল আবিব, জেরুজালেমসহ বিভিন্ন শহরের দিকে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাত এক ভয়াবহ আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে। আর ঠিক এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের ভূখণ্ড নিয়ে এমন ভুল কেবল অস্বস্তিকরই নয়, কৌশলগতভাবে হতাশাজনক।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর এমন একটি ভুল, তা যতটাই ‘অনিচ্ছাকৃত’ হোক না কেন, এক ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্পষ্ট অবহেলার ইঙ্গিত দেয়। ভারত তার ভূখণ্ড নিয়ে যে আপসহীন, এই বার্তা আন্তর্জাতিক মঞ্চে বারবার জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে।