ভারত বর্তমানে অর্থনৈতিক (Economic Crossroads) এক সঙ্কটময় সময়ের মুখোমুখি। ২০২৫ সালের ২৭ আগস্ট থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় রপ্তানির উপর ৫০% শুল্ক আরোপ করেছে, যা ভারতের অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। আনুমানিক ৭০% বা প্রায় ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ভারতীয় রপ্তানি এই উচ্চ শুল্কের আওতায় এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ ভারতের রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং প্রবৃদ্ধির হার আরও মন্থর করতে পারে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা স্কট বেসেন্ট আশাবাদী মন্তব্য করে বলেছেন, “ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। শেষ পর্যন্ত আমরা সমাধান খুঁজে পাব।”
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি জাপান ও রাশিয়ার নেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে ভারত-জাপান কৌশলগত সম্পর্ক। প্রধানমন্ত্রী মোদী জোর দিয়ে বলেছেন, ভারত-জাপান অংশীদারিত্ব “কৌশলগত ও স্মার্ট”, যা অর্থনৈতিক যুক্তির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠছে। জাপানি ব্যবসার জন্য ভারতকে গ্লোবাল সাউথে প্রবেশের সিঁড়ি হিসেবে তুলে ধরে তিনি দুই দেশের যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে এশিয়ার স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধি বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন। নবায়নযোগ্য শক্তি, অটোমোবাইল ও উৎপাদন খাতকে ভবিষ্যতের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ভারতীয় শেয়ারবাজারেও গত এক বছরে বড় ধাক্কা লেগেছে। এমএসসিআই ইন্ডিয়া সূচক গত ১৫ বছরে সর্বাধিক ২৪% পিছিয়ে পড়েছে এমার্জিং মার্কেট সূচকের তুলনায়। বিপরীতে, কোরিয়া ও তাইওয়ানের বাজার যথাক্রমে ৩৪% ও ৪৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, ঐতিহাসিকভাবে এমন দীর্ঘমেয়াদি পিছিয়ে পড়ার পর ভারতীয় বাজারে পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা থাকে। এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে বাজারে সম্ভাব্য উত্থানের। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, মার্কিন শুল্ক নীতি ও উচ্চমূল্যায়ন নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে।
অন্যদিকে, এশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও সতর্কতার সঙ্গে নীতি নির্ধারণ করছে। নমুরার সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, মার্কিন শুল্কনীতির প্রভাব, চীনের অর্থনৈতিক মন্থরতা, মুদ্রাস্ফীতির হার লক্ষ্য মাত্রার নিচে নেমে আসা এবং ফেডারেল রিজার্ভের সম্ভাব্য সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত এশিয়ার দেশগুলোকে আর্থিক নীতি শিথিল করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ায় মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্য থেকে ০.৬ শতাংশ এবং ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ফিলিপাইনে অন্তত ১ শতাংশ কম। এর ফলে, সুদের হার আরও কমানোর সুযোগ রয়েছে।
বিশ্ববাজারে অস্থিরতা এবং উচ্চ শুল্কনীতির মধ্যে ভারতের জন্য আগামী সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ, কৌশলগত জোট এবং উৎপাদন খাতকে চাঙ্গা করা এখন ভারতের প্রধান চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতকে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্ববাজারে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে হবে।