‘অঘটন ঘটলে দায়ী হবে মুনির’, জেল থেকে বার্তা ইমরান খানের

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, (Imran Khan) যিনি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দী রয়েছেন, সম্প্রতি একটি গুরুতর অভিযোগ তুলে দেশের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের…

Imran Khan alleges asim munir

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, (Imran Khan) যিনি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দী রয়েছেন, সম্প্রতি একটি গুরুতর অভিযোগ তুলে দেশের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন, জেলে তাঁর বা তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবির কিছু হলে তার জন্য আসিম মুনিরকে দায়ী করতে হবে।

৭২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার-রাজনীতিবিদ জানিয়েছেন, তাঁরা জেলে ‘অমানবিক আচরণ’ এবং মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই বক্তব্য পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে পিটিআই-এর ৫ অগাস্ট থেকে দেশব্যাপী বিক্ষোভের পরিকল্পনার প্রাক্কালে।

   

ইমরান খান তাঁর পোস্টে বলেছেন, “সাম্প্রতিক দিনগুলিতে জেলে আমার প্রতি কঠোর আচরণ আরও তীব্র হয়েছে। আমার স্ত্রী বুশরা বিবির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। এমনকি তাঁর সেলে থাকা টেলিভিশনটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার এবং কয়েদিদের জন্য আইনি অধিকার—সবই আমাদের ক্ষেত্রে বাতিল করা হয়েছে।”

তিনি অভিযোগ করেছেন, জেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট এবং একজন কর্নেল আসিম মুনিরের নির্দেশে এই কাজগুলি করছেন। তিনি আরও বলেন, “আমি আমার দলকে স্পষ্ট নির্দেশ দিচ্ছি—জেলে আমার কিছু হলে আসিম মুনিরকে দায়ী করতে হবে। আমি সারা জীবন জেলে কাটাতে প্রস্তুত, কিন্তু অত্যাচারের কাছে কখনো মাথা নত করব না।”ইমরান খানের এই অভিযোগের পেছনে তাঁর এবং আসিম মুনিরের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে।

খানের প্রধানমন্ত্রিত্বকালে ২০১৯ সালে আসিম মুনিরকে আইএসআই (ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স) প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। খান দাবি করেছেন, এই ঘটনার পর মুনির তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবির সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেছিলেন, যা বুশরা প্রত্যাখ্যান করেন। খানের মতে, এই প্রত্যাখ্যানের জেরেই বুশরা বিবির প্রতি ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা হিসেবে তাঁকে নিশানা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “বুশরা বিবি একজন ব্যক্তিগত নাগরিক এবং গৃহিণী, তাঁর কোনো রাজনৈতিক ভূমিকা নেই।

তবুও তাঁকে এই নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে।”ইমরান খান ২০২৩ সালের অগাস্ট থেকে আদিয়ালা জেলে বন্দী রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় গোপনীয় তথ্য ফাঁস এবং অবৈধ বিয়ে সহ একাধিক মামলায় অভিযোগ রয়েছে।

তিনি এই মামলাগুলিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ বলে দাবি করেছেন। তাঁর দল পিটিআইও এই অভিযোগ সমর্থন করে বলেছে, এই মামলাগুলির কোনো শক্ত ভিত্তি নেই এবং এগুলো ইমরান খানকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য সাজানো হয়েছে।

ইমরান খানের বক্তব্যের সময়টিও তাৎপর্যপূর্ণ। পিটিআই ৫ অগাস্ট থেকে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে, যার লক্ষ্য শেহবাজ শরিফ সরকার এবং সামরিক প্রতিষ্ঠানের উপর চাপ সৃষ্টি করে খানের মুক্তির দাবি জানানো।

Advertisements

এই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেবেন খানের দুই ছেলে, সুলেমান ইসা খান এবং কাসিম খান, যারা এতদিন রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। ইমরান খানের প্রাক্তন স্ত্রী জেমাইমা গোল্ডস্মিথও সম্প্রতি জানিয়েছেন, তাঁর ছেলেদের সঙ্গে খানের কোনো যোগাযোগের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

তিনি বলেন, “আমার ছেলেরা তাদের বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারেনি। ইমরান প্রায় দুই বছর ধরে একাকী কারাগারে রয়েছেন।”ইমরান খানের এই বক্তব্য পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

তিনি দাবি করেছেন, পাকিস্তানে এখন ‘জঙ্গলের আইন’ চলছে, এবং আসিম মুনিরের প্রভাবে দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক কাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, “দোষী সন্ত্রাসী এবং খুনিদের তুলনায় আমাদের সঙ্গে আরও খারাপ আচরণ করা হচ্ছে।

একজন সামরিক কর্মকর্তা, যিনি খুনের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত, তিনি জেলে ভিআইপি সুবিধা পাচ্ছেন, অথচ আমাকে অবিরাম নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।”এই ঘটনা পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনার প্রতিফলন। ইমরান খান তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বকালে সামরিক বাহিনীর সমর্থন পেয়েছিলেন বলে মনে করা হয়, কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁর সঙ্গে সামরিক প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

তিনি দাবি করেছেন, তাঁর গ্রেপ্তারের পেছনে আসিম মুনির এবং নওয়াজ শরিফের মধ্যে একটি ‘লন্ডন প্ল্যান’ রয়েছে, যদিও এই দাবির কোনো প্রমাণ তিনি দিতে পারেননি।ইমরান খানের এই আহ্বান দেশের জনগণের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে, বিশেষ করে তাঁর দলের সমর্থকদের মধ্যে।

গোবিন্দভোগে বদলে যাচ্ছে গ্রামের অর্থনীতি, ‘দিদি’দের হাত ধরেই সাফল্য

তবে, সরকার এবং সামরিক বাহিনী এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। আসিম মুনিরের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সরকারি বিবৃতি আসেনি। আগামী দিনে পিটিআই-এর বিক্ষোভ এবং খানের এই বক্তব্য পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যায়, তা দেখার বিষয়।