ইলামাবাদ: পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কেন্দ্র করে দেশে নতুন রাজনৈতিক ঝড় উঠেছে। ৭৩ বছর বয়সী এই রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে পরিবারের- দলের নেতৃত্বের দাবি, জেলাশাসন ও প্রশাসন “সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউট” সৃষ্টি করেছে; তাঁর শরীরিক অবস্থা ও নিরাপত্তা নিয়ে তথ্য দৃশ্যত লুকানো হচ্ছে। ইমরানের ছেলে কাসিম খান, বোন নুরিন নিয়াজি ও পিটিআই নেতা–কর্মীরা রয়েছেন প্রচণ্ড জোকায়াসনে; তারা বলছেন, আদিয়ালা জেলে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর উপর একাধিক বিধ্বংসী ও নিষ্পেষণাত্মক বিধান প্রয়োগ করা হচ্ছে।
সামাজিক মিডিয়ায় ছড়ানো এক চাঞ্চল্যকর গুজব—ইমরানকে জেলে হত্যা করা হয়েছে—সংবাদটি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়। ‘Afghanistan Times’ নামে একটি হ্যান্ডল এমন দাবি করে যে তাদের কাছে বিশ্বস্ত সূত্র রয়েছে। তবে সিদ্ধান্তমূলক কোনো সরকারি সংস্থা বা স্বীকৃত মিডিয়া এটি নিশ্চিত করেনি; আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষও গুজবকে স্পষ্টভাবে খণ্ডন করে বলেছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী “সুস্থ আছেন” এবং কোনও ধরনের মারাত্মক ঘটনা ঘটেনি।
‘৮৪৫ দিনের বন্দিত্ব, শেষ ছয় সপ্তাহ ‘ডেথ সেলে’, প্রমাণ লুকানো হচ্ছে’
এক্সে (টুইটার) পোস্টে কাসিম দাবি করেছেন, তাঁর পিতা গত ৮৪৫ দিন ধরে কারাবন্দি। গত ছয় সপ্তাহ ধরে একাকীত্বে রাখা হচ্ছে; তিনি ‘ডেথ সেলে’ বন্দী। আদালতের আদেশ সত্ত্বেও পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীদের ভিজিট বন্ধ রাখা হয়েছে।
ইমরানের বোনদের বহুবার দেখা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে; তাঁর সন্তানদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই, প্রমাণও নেই—‘No proof of life’।
কাসিম লেখেন, “এই সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউট নিরাপত্তা প্রটোকল নয়; এটি ইমরানের অবস্থা লুকানোর একটি পরিকল্পনা।” তিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়ে প্রমাণ-চাহিদা ও অবিলম্বে সাক্ষাৎস্বাধীনতা দাবি করেছেন—সতর্ক করে বলেছেন, “যারা এর পেছনে—সরকার বা তাদের হ্যান্ডলাররা—তাদের বিরুদ্ধে দায়-মোচন করা হবে না।”
‘মিডিয়া সংবেদনশীলতা বন্ধ, কর্মকর্তাদের নিপীড়ন’ Imran Khan Proof of Life Adiala Jail
প্রাক্তন PM–এর বোন নুরিন নিয়াজি এএনআইকে দাবি করেছেন—পাকিস্তানে এখনি এমন রাজ্য-স্তরের সেন্সরশিপ চলছে যেখানে সাংবাদিকদের গ্রেফতার, হুমকি ও সম্পত্তি অবরুদ্ধ করার ঘটনা রয়েছে। তিনি বলেন, অনেক সাংবাদিক দেশ ছেড়েছেন; যারা রয়ে গেছেন, তাদের বক্তব্যও চাপিয়ে স্বীকার করা হয়। তার তীব্র ভাষ্য—“আমরা যা হিটলারের কথা পড়েছি, আজ তা পাকিস্তানে দেখা যাচ্ছে।” নুরিন শিবিরে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করে বলেন, বর্তমান প্রশাসন দুর্বল ও জনবিরোধী।
পিটিআই–এর উদ্বেগ ও কর্মসূচি: আদিয়ালার বাইরে ধর্না
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সোহাইল আফ্রিদি—পিটিআই শিবিরের উচ্চস্তরের নেতা—আদিয়ালা জেলে বারবার দেখা করতে না পারায় জেলামুখী ঢলে ধর্নায় বসেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন আদালতের আদেশ অমান্য করা হচ্ছে এবং ২৫ মিলিয়ন ভোটারের প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাত বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে—এটি একটি “দুর্নীতিপূর্ণ ও বিপজ্জনক নজির” স্থাপন করছে। পিটিআই–র অন্যান্য নেতারা সরকারকে স্বচ্ছতা বজায় রেখে ‘প্রুফ অফ লাইফ’ দেখাতে বলছেন।
জেল কর্তৃপক্ষের মন্তব্য: ‘গুজব ভিত্তিহীন, ইমরান সুস্থ’
আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষ সামাজিক মিডিয়ায় ছড়ানো গুজবকে ভিত্তিহীন বলে আখ্যায়িত করেছে। তাদের তরফে বলা হয়েছে—ইমরান খান স্বাস্থ্যে ভালো আছেন, তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও যত্ন দেওয়া হচ্ছে এবং তাঁকে অন্য কোথাও স্থানান্তর করা হয়নি।
তবে পরিবারের অভিযোগের পাশাপাশি, গত সপ্তাহে ইমরানের তিন বোন—নুরিন, আলীমা এবং ডা. উসমা—যখন আদিয়ালা জেলের বাইরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছিলেন, তখনই পুলিশ হস্তক্ষেপ করে বলে পরিবার বলছে। তাদের বিবৃতি অনুযায়ী, অভিযানে অন্ধকার করে দেওয়া হয়েছিল; নুরিন দাবি করেছেন যে তাঁকে চুল ধরে টেনে ফেলা হয়েছিল এবং তিনি আহত হয়েছেন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সম্ভাব্য পরিণতি
আদিয়ালা জেল ঘটনাচক্রে পাঞ্জাব প্রাদেশিক সরকারের আওতায়। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ বলছেন—জেলের সাক্ষাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত তার অধীনস্থ কাগজে নেই। পাশাপাশি, ইমরান নিজে আগেই অভিযোগ করেছেন যে জেলের বিষয়বস্তু একটি সামরিক কর্নেলের তত্ত্বাবধানে আছে—এই ধরনের মন্তব্য যোগ করে ঘটনার রাজনৈতিক জটিলতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে, দণ্ডনীয় অভিযোগ ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা চললেও, একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার মানবিক অধিকার ও স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত স্বচ্ছতার প্রশ্ন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিতর্ককে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও উত্তপ্ত করে তুলেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় গজবে ভূমিকম্প ও প্রশাসনিক নীরবতার বিরুদ্ধে সরকারের সমালোচনা তীব্র হচ্ছে—আর তা দেশের রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
