পাকিস্তানে অজ্ঞাত পরিচয় ‘দুস্কৃতী’র গুলিতে খতম JUI-F নেতা হাফিজ

Prominent JUI-F leader Hafiz Abdul Salam Arif shot dead by unidentified motorcyclists in Charsadda, Pakistan on Nov 4, 2025. No claim of responsibility; Maulana Fazlur Rehman condemns the targeted killing amid rising security concerns.

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের চারসদ্দা জেলায় এক ভয়াবহ দুষ্কৃতি হামলায় জামিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম ফজল (JUI-F) এর এক বিশিষ্ট নেতা এবং ধর্মীয় গুরু হাফিজ আব্দুল সালাম আরিফ নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর ২০২৫) দুপুরে মান্দানি থানার এলাকায় ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় অজ্ঞাত দুই মোটরসাইকেল চালক অপরাধীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। হাফিজ আব্দুল সালাম তখন মসজিদে নামাজ আদায় করে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। হামলার পর তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান, এবং তার লাশ জামালাবাদ সিভিল হাসপাতালে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়েছে।

Advertisements

পুলিশ জানিয়েছে, এই টার্গেটেড কিলিংয়ের কোনও দায় স্বীকার করেনি কোনো গোষ্ঠী, কিন্তু চারসদ্দা এলাকায় সন্ত্রাসবাদের ছায়া আরও ঘন হয়ে উঠেছে। JUI-F নেতা মাওলানা ফজলুর রহমান এই হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং সরকারকে দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের আহ্বান জানিয়েছেন। এই ঘটনা পাকিস্তানের রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় মহলে গভীর উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, যেখানে অজ্ঞাত অপরাধীরা ধর্মীয় নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

   

ঘটনার বিবরণ জানা যায়েছে যে, হাফিজ আব্দুল সালাম আরিফ উমরযাই রোডে তাঁর গাড়িতে যাচ্ছিলেন, যখন দুই অজ্ঞাত মোটরসাইকেল চালক হঠাৎ আক্রমণ করে। তারা অন্ধাদৃষ্টিতে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়, এবং হাফিজ সাহেব ঘটনাস্থলে পড়ে মারা যান। চোখের পলকে ঘটে যাওয়া এই হামলায় স্থানীয়রা হতবাক, এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে। চারসদ্দা জেলা পুলিশের এসপি মান্দানি বলেছেন, “এটি একটি টার্গেটেড অ্যাটাক, এবং আমরা অপরাধীদের ধরতে সিসিটিভি ফুটেজ এবং স্থানীয় গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করছি।” কোনো গোষ্ঠী দায় স্বীকার না করলেও, এলাকায় টিটিপি (তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান) এবং অন্যান্য চরমপন্থী গ্রুপের কার্যকলাপের সন্দেহ করা হচ্ছে। হাফিজ আব্দুল সালাম ছিলেন JUI-F-এর প্রাদেশিক শুরা (পরিষদ) সদস্য, এবং তাঙ্গি উপজেলার আংগর বাড়ি বান্দে মাদ্রাসা আবু বকর সিদ্দিকের প্রধান। তিনি জামালাবাদ ডেইরি ফার্ম এলাকার একটি মসজিদে ইমামও ছিলেন, এবং তার নাত খুয়ান (ইসলামী কবিতা পাঠক) হিসেবে পরিচিতি ছিল। তাঁর হত্যা JUI-F-এর মতো ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের উপর একটা বড় আঘাত।

এই হামলা পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে চলমান সন্ত্রাসবাদের একটা নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। খাইবার পাখতুনখোয়ায় গত কয়েক মাসে ধর্মীয় নেতা এবং রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে এমন টার্গেটেড অ্যাটাক বেড়েছে, যা আইএসআই (ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স)-এর গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের দুর্বলতা তুলে ধরছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, অজ্ঞাত অপরাধীরা পাকিস্তানে বিশৃঙ্খলা ছড়াচ্ছে, এবং এই হামলাগুলো প্রায়ই অদৃশ্য হয়ে যায়। JUI-F নেতা মাওলানা ফজলুর রহমান বলেছেন, “এই নৃশংস হত্যা আমাদের দল এবং সম্প্রদায়ের উপর একটা ষড়যন্ত্র, সরকারকে অবিলম্বে তদন্ত করে ন্যায়বিচার করতে হবে।” JUI-F-এর অন্যান্য নেতারা এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং সুরক্ষা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। চারসদ্দা এলাকায় ইতিমধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়া করা হয়েছে, কিন্তু স্থানীয়রা ভয়ে থরথর করে কাঁপছেন।

Advertisements

এই হত্যার পটভূমিতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। JUI-F, যা ইসলামী রাজনীতির একটা প্রধান শক্তি, গতকালের মতো এমন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি চরমপন্থী গ্রুপের কাজ হতে পারে যারা ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রভাব কমাতে চায়। পুলিশের তদন্ত চলছে, কিন্তু অপরাধীদের ধরতে সময় লাগতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর ভাইরাল হয়েছে, যেখানে #HafizAbdulSalamArif এবং #CharsaddaAttack ট্যাগ ট্রেন্ড করছে। লোকেরা লিখছেন, “পাকিস্তানে নিরাপত্তা কোথায়? ধর্মীয় নেতারাও নিরাপদ নয়!” এই ঘটনা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার উপর প্রশ্ন তুলেছে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও নজর রাখছে। হাফিজ আব্দুল সালামের পরিবার এবং সমর্থকরা শোকে মুহ্যমান, এবং তার জানাজার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। এই হত্যা শুধু একজন নেতার মৃত্যু নয়, পাকিস্তানের শান্তির উপর একটা আঘাত। সকলে নিরাপদ থাকুন এবং শান্তির আহ্বান জানান!