ইরান থেকে মালয়েশিয়া হিজাব পুড়িয়ে চলছে স্বাধীনতার আন্দোলন

global-hijab-freedom-movement-iran-malaysia-women-rights

কলকাতা: ইরানের রাস্তায় একজন নারী তার হিজাব খুলে ফেলে চুলে হাওয়া লাগানোর স্বাধীনতা উপভোগ করছেন। পাশাপাশি পাকিস্তানের লাহোরে একদল নারী বুরকা পুড়িয়ে দিয়ে চিৎকার করছেন, “আমাদের শরীর, আমাদের পছন্দ!”। এই দৃশ্যগুলো কোনো ছবির ফ্রেম নয়, বাস্তবের অংশ যা মুসলিম নারীদের হিজাব ও বুরকা থেকে মুক্তির দাবিকে একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলনে রূপ দিয়েছে।

Advertisements

   

ইরান, ইরাক, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সিরিয়া এবং মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোতে এই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে, যা শুধুমাত্র পোশাকের প্রশ্ন নয়, বরং নারীদের স্বাধীনতা, সমতা এবং ধর্মীয় চাপমুক্ত জীবনের লড়াই। এই আন্দোলনের উৎস ইরান, যেখানে ২০২২ সালে মাহসা আমিনির হিজাব না পরার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর একটি বিস্ফোরক সৃষ্টি করেছিল।

আজও সেই আগুন জ্বলছে। সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৫ সালে ইরানের রাস্তায় নারীরা হিজাব না পরে ঘুরছেন, যদিও সরকার ক্যামেরা, ড্রোন এবং গুপ্তচরদের মাধ্যমে নজরদারি বাড়িয়েছে। সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ইন ইরানের তথ্যমতে, গত জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে ৫০টিরও বেশি ক্যাফে, রেস্তোরাঁ এবং বুটিক সিল করে দেওয়া হয়েছে কারণ সেখানে হিজাববিহীন নারীরা প্রবেশ করেছিলেন।

মাসিহ আলিনেজাদের নেতৃত্বে ‘মাই স্টিয়ারিং দ্য উইন্ড’ ক্যাম্পেইন, যা ২০১৭ সাল থেকে চলছে, এখন লক্ষাধিক নারীকে অনুপ্রাণিত করেছে। তেহরানের রাস্তায় নারীরা বলছেন, “হিজাব আমাদের শরীরের কারাগার, আমরা এখন দরজা খুলে দিচ্ছি।” এই প্রতিবাদ থেকে উদ্ভূত ‘গার্লস অফ এঙ্গেলাব’ আন্দোলন সংবিধানের ৬৩৮ ধারা যা হিজাব না পরলে জেল বা জরিমানার বিধান করে সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি তুলেছে।

ইরানের প্রভাব ইরাকে ছড়িয়েছে, যেখানে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় হিজাবের চাপ বেড়েছে। উইলসন সেন্টারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরাকী নারী অ্যাকটিভিস্টরা প্রতিষ্ঠানে হিজাবের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছেন, যদিও রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতারা এটিকে ‘ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করছেন। বাগদাদে নারীরা অনলাইন ফোরামে ইরানী বোনদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বলছেন, “হিজাব আমাদের অদৃশ্য কারাগারের গেট।”

Advertisements

সিরিয়ায়, যেখানে ২০১০ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিকাব নিষিদ্ধ, নারীরা এখন পুরো বুরকা-বিরোধী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় এই ঢেউ পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে পৌঁছেছে। পাকিস্তানে, যেখানে হিজাব আইনত বাধ্যতামূলক নয় কিন্তু উত্তর-পশ্চিমের পশতুন এলাকায় তালেবান-সমর্থিত চাপ রয়েছে, নারীরা রাস্তায় বুরকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ করছেন।

একটি সাম্প্রতিক ভিডিওতে দেখা গেছে, লাহোরের নারীরা চিৎকার করছেন, “আমরা আর গোপন থাকব না!”। বাংলাদেশে, যেখানে ২০২২ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৪৪% লোক হিজাব পরা নারীদের ‘ভালো মেয়ে’ মনে করে, নারীরা এখন পরিবারের চাপের বিরুদ্ধে লড়ছেন।

মালয়েশিয়ায়, যেখানে হিজাব সাংস্কৃতিকভাবে প্রচলিত কিন্তু আইনত বাধ্যতামূলক নয়, নারীরা স্কুল এবং কর্মক্ষেত্রে চাপের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছেন। কুয়ালালামপুরে একটি প্রতিবাদে শতাধিক নারী যোগ দিয়েছেন, যা সরকারকে নিরপেক্ষ নীতির দাবি তুলেছে।

একজন নেত্রী বলেছেন, “হিজাব যদি আমাদের পছন্দ হয়, তাহলে পরব, কিন্তু জোর করে নয়।” এই আন্দোলনের ছড়িয়ে পড়া সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য—যেখানে টুইটারে (এখন এক্স) হাজারো পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “ইরান থেকে মালয়েশিয়া, মুসলিম নারীরা উঠে দাঁড়িয়েছে স্বাধীনতা, সমতা এবং পছন্দের অধিকারের জন্য।”