ভূমিকম্পে ভাঙল জেলের দেওয়াল, পালাল কয়েকশো কয়েদি

পকিস্তানের করাচিতে মালির কেন্দ্রীয় কারাগারে একের পর এক ভূমিকম্পে জেলের দেয়াল ভেঙে পড়ায় ঘটে গেল নজিরবিহীন এক জেলব্রেক (Jailbreak in Karach)। একাধিক কম মাত্রার ভূমিকম্পের…

Earthquake Triggers Massive Jailbreak in Karachi

পকিস্তানের করাচিতে মালির কেন্দ্রীয় কারাগারে একের পর এক ভূমিকম্পে জেলের দেয়াল ভেঙে পড়ায় ঘটে গেল নজিরবিহীন এক জেলব্রেক (Jailbreak in Karach)। একাধিক কম মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে জেলের কাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সেই সুযোগে কয়েকশো কয়েদি পালিয়ে যায়।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩.২ থেকে ৩.৬ মাত্রার তিনটি ভূমিকম্প করাচি অঞ্চলে আঘাত হানে। এর উৎস ছিল শহরের পূর্বাঞ্চলের লান্ধি ফল্ট অঞ্চল। এই কম্পনগুলোতে মালির জেলের একাধিক স্থাপনার দেয়ালে ফাটল ধরে এবং পরবর্তীতে একটি বড় অংশ ভেঙে পড়ে।

   

ভূমিকম্পের পর কর্তৃপক্ষ কয়েদিদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ব্যারাক থেকে বাইরে সরিয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু পরিস্থিতি অচিরেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ৬০০ থেকে ১,০০০ জন বন্দি প্রধান ফটকের কাছে জড়ো হয়ে পড়ে। আতঙ্ক, বিভ্রান্তি এবং সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তারা প্রহরীদের উপর হামলা চালায় এবং জোর করে বেরিয়ে যায়।

প্রথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বন্দিরা প্রধান ফটক দিয়ে পালিয়েছে, তবে পরে নিশ্চিত হয় যে জেলের একটি পাশের দেয়াল ভেঙে পড়ার কারণেই ব্যাপক পালানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই ঘটনায় ২১৬ জন বন্দি পালিয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ৮০ জনকে পুনরায় আটক করা গেলেও এখনো ১৩৫ জন পলাতক রয়েছে।

পালানোর সময় বন্দিরা প্রহরীদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে গুলি চালায়। এই গুলিবর্ষণে একজন বন্দি নিহত হয় এবং ৩ জন ফ্রন্টিয়ার কর্পস (এফসি) সদস্য ও ১ জন জেল প্রহরী আহত হন।

সিন্ধু পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল গুলাম নবি মেমন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মালির জেলে অধিকাংশ বন্দি মাদক-সম্পর্কিত মামলায় জড়িত ছিল। তাদের অনেকেই মানসিকভাবে দুর্বল ও সীমিত সম্পদের অধিকারী, ফলে তাদের পুনরায় আটক করা তুলনামূলকভাবে সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Advertisements

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনার পেছনে পাকিস্তানের দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং কারাগার ব্যবস্থাপনায় গভীর ত্রুটি রয়েছে। মালির জেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার এমন ভেঙে পড়া জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ, পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের মধ্যে কিছু সহিংস অপরাধীও রয়েছে, যারা সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়িত থাকতে পারে।

বর্তমানে করাচি শহর জুড়ে চিরুনি অভিযান চলছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরের ঘনবসতির কারণে পলাতকদের খোঁজে অভিযান অত্যন্ত কঠিন হবে এবং সকল বন্দিকে ফের গ্রেফতার করতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।

ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মালির এই জেলব্রেক পাকিস্তানের ইতিহাসে অন্যতম বড় কারাগার নিরাপত্তা ব্যর্থতা হিসেবে ধরা হচ্ছে। এই ঘটনার পর দেশজুড়ে নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে এবং কারাগার ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের দাবি আরও জোরালো হচ্ছে।