HomeTop Storiesরহস্যময় ড্রোন হামলায় উত্তেজনা ছড়াল পাকিস্তানে

রহস্যময় ড্রোন হামলায় উত্তেজনা ছড়াল পাকিস্তানে

- Advertisement -

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের খাইবার জেলার জাব্বা মীলা এলাকায় রহস্যময় ড্রোন হামলায় (ISIS-K Drone Strike) ফের উত্তেজনা ছড়াল পাকিস্তানে। আফগান তালিবান-ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছে, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ দুটি অজ্ঞাত পরিচয়ের ড্রোন ওই এলাকায় আইএসআইএস-কে (ISIS-K) টার্গেট করে হামলা চালায়। হামলাগুলি সরাসরি দু’টি আলাদা গোপন ঠিকানায় হয়, যেখানে বহু গুরুত্বপূর্ণ আইএসআইএস নেতারা উপস্থিত ছিলেন বলে সূত্রের দাবি।

তালিবান-ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, হামলার সময় ওই দুটি টার্গেটেড স্থানে উপস্থিত ছিলেন আইএস-খোরাসানের অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার আবদুল হাকিম তোহিদি, গুল নাজিম এবং সাদিক ইয়ার—যারা বিগত কয়েক বছরে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে একাধিক ভয়াবহ হামলার সঙ্গে যুক্ত। বিশেষ করে কাবুল, নাঙ্গরহার, কুন্দুজসহ আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে রক্তক্ষয়ী বোমা বিস্ফোরণের নেপথ্যে এই তিনজনের নাম বহুবার ঘুরে এসেছে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরেও আইএস-কির উপস্থিতি ঠেকাতে নিরাপত্তা বাহিনী যখন দিশেহারা, সেই সময় এই ড্রোন হামলার ঘটনা নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

   

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত রাত থেকেই আকাশে একাধিক ড্রোনের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। ফলে বহু মানুষ আশঙ্কায় ঘর থেকে বেরোননি। সন্ধ্যায় হঠাৎই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়, এবং তা সঙ্গে সঙ্গেই বোঝা যায় যে কোনও সামরিক হামলা চলছে। যদিও এই অঞ্চলে আগে মার্কিন ড্রোন হামলার অভিজ্ঞতা রয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন হামলা বিরল। এ কারণে ড্রোনগুলোর পরিচয় ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।

সূত্রের দাবি, হামলার পর ড্রোনদুটি আফগানিস্তানের দিকেই উড়ে যায়। খাইবার জেলার পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় ড্রোন চিহ্নিত করা কঠিন হলেও স্থানীয়রা পরিষ্কারভাবে দেখতে পেয়েছেন, বিস্ফোরণের পর অচেনা ড্রোনগুলো পূর্ব দিকের পাহাড় অতিক্রম করে সীমান্তের দিকে এগিয়ে যায়। এর ফলে ধারণা করা হচ্ছে, অপারেশনটি আফগানিস্তান থেকে চালানো হতে পারে অথবা সেখানে অবস্থিত কোনও বেস থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকতে পারে।

হামলার সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীও সক্রিয় হয়ে ওঠে। স্থানীয় সূত্রের মতে, সেনা সদস্যরা ভারী মেশিনগান থেকে আকাশের দিকে গুলি ছোড়ে, উদ্দেশ্য ছিল ড্রোনকে নামিয়ে আনা বা দূরে সরিয়ে দেওয়া। তবে তারা আদৌ টার্গেট চিহ্নিত করতে পেরেছেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। বিস্ফোরণের পর সেনাবাহিনীর টহলদারীও বাড়ানো হয় এবং এলাকায় প্রবেশাধিকার সীমিত করে দেওয়া হয়।

আইএসআইএস খোরাসান (ISIS-K)—যাদের সঙ্গে আফগান তালিবানের দীর্ঘদিনের বৈরিতা—সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে হামলা বাড়িয়েছে। বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বালুচিস্তানের বিভিন্ন জেলায় আইএস-কির কার্যকলাপ বেড়েছে। ফলে তালিবান-সংযুক্ত সংবাদমাধ্যমগুলোর এই দাবি চোখে পড়ার মতো। আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতা দখলের পর থেকেই আইএস-কির সঙ্গে তাদের সংঘাত বাড়তে থাকে, এবং দুই সংগঠনের রক্তক্ষয়ী লড়াই সীমান্ত জুড়ে বিস্তার লাভ করে। এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের মাটিতে আইএস-কির এমন শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি এবং তাদের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলা—দুই দেশেই নতুন রাজনৈতিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

তবে পাকিস্তান সরকার বা সেনাবাহিনী এখনও পর্যন্ত এই হামলা নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। অতীতে ড্রোন হামলার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অবস্থান বেশ জটিল ছিল—সরকার অনেক সময় দাবি করেছে তারা হামলার বিষয়ে জানত না, আবার কিছু ক্ষেত্রে নীরব থেকেছে। এই ঘটনায়ও একই ধরনের নীরবতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি যেভাবে খারাপের দিকে যাচ্ছে, তাতে বিদেশি বা অজ্ঞাত উৎস থেকে ড্রোন হামলা ভবিষ্যতে নতুন ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি করতে পারে।

এদিকে আশঙ্কা বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। রাতের ড্রোনের শব্দ ও বিস্ফোরণের পর বহু গ্রামবাসী বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। শিশুরা আতঙ্কে কান্নাকাটি করেছে, প্রবীণরা মনে করছেন এটি আসন্ন বড় হামলার পূর্বাভাস। নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিও গোটা এলাকায় আরও দৃশ্যমান হয়েছে। সেনাবাহিনী ঘনঘন পাহারা দিচ্ছে, স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করছে এবং ড্রোনগুলো কোথা থেকে এসেছে তার তথ্য সংগ্রহ করছে।

এই হামলায় আইএস-কির শীর্ষ নেতারা নিহত হয়েছেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তালিবান-ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করেছে “উচ্চপদস্থ সদস্যদের টার্গেট করা হয়েছে”, তবে মৃত্যুর বিষয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে, তবে তারা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

সব মিলিয়ে খাইবার জেলার জাব্বা মীলা এলাকায় এই রহস্যময় ড্রোন হামলা শুধু সীমান্ত রাজনীতির উত্তেজনাই বাড়ায়নি, বরং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতিকেও নতুন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। হামলার দায় কেউ স্বীকার না করায় পুরো ঘটনা এখন ধোঁয়াশায় ঢাকা। তবে স্পষ্ট যে সীমান্ত এলাকায় আইএস-কির সক্রিয়তা এবং তাদের বিরুদ্ধে গোপন অভিযান—দুই দেশকেই আরও অনিশ্চিত পথে ঠেলে দিচ্ছে।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular