ওয়াশিংটন: প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) বাণিজ্যনীতির অন্যতম বিতর্কিত পদক্ষেপ ‘ট্যারিফ’ বা শুল্ক আরোপের ক্ষমতা নিয়ে আদালতে বড় ধাক্কা খেলেন তিনি। ২৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সার্কিট কোর্ট অফ আপিলস (Federal Circuit Court of Appeals) একটি ঐতিহাসিক রায়ে জানিয়েছে, ট্রাম্প এককভাবে আমেরিকার শুল্ক কাঠামো পরিবর্তন করার সাংবিধানিক ক্ষমতা রাখেন না। ৭-৪ ভোটে আদালতের এই রায় কার্যত ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতিকে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং দেশের বাণিজ্য নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।
ট্রাম্প এই রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়ে তীব্র আক্রমণ করেছেন আদালতকে। রায় ঘোষণার এক ঘণ্টার মধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি লিখেছেন, “এই রায় আমেরিকাকে ধ্বংস করে দেবে। ফেডারেল সার্কিট একটি অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট আদালত।” তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, আপিলের সময়সীমা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ট্যারিফ কার্যকর থাকবে এবং তিনি সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) এই রায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।
এই মামলার কেন্দ্রবিন্দু হলো VOS Selections, Inc v United States মামলা, যেখানে আদালত খতিয়ে দেখেছে ট্রাম্প ১৯৭৭ সালের International Emergency Economic Powers Act (IEEPA) আইনের আওতায় যে ব্যাপক ট্যারিফ আরোপ করেছিলেন, তা কতটা বৈধ। IEEPA অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন যদি তা দেশের “জাতীয় নিরাপত্তা, বৈদেশিক নীতি বা অর্থনীতির ওপর অস্বাভাবিক ও গুরুতর হুমকি” সৃষ্টি করে। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল সংকট (fentanyl crisis) এবং আমেরিকার বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি (trade deficit) এই জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার যথেষ্ট কারণ।
কিন্তু আদালতের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিরা মনে করেছেন, এই যুক্তিগুলি IEEPA আইনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং প্রেসিডেন্টের পক্ষে এই ক্ষমতার অপব্যবহার করা সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আদালতের মতে, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া একতরফাভাবে “trafficking” ও “reciprocal” ট্যারিফ আরোপ করে ট্রাম্প তার সীমা অতিক্রম করেছেন।
ট্রাম্পের ট্যারিফ নীতি মূলত চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে আমেরিকার অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু এই নীতির ফলে আমেরিকান আমদানিকারক এবং ব্যবসায়ীরা বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে অভিযোগ। আদালতের রায়ের পর আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ীরা স্বস্তি প্রকাশ করলেও ট্রাম্পপন্থীরা এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ হিসেবে দেখছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৫ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এই রায় ট্রাম্পের ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে। রিপাবলিকান প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে তিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি ও কড়া বাণিজ্যনীতিকে অন্যতম প্রধান ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেছেন। আদালতের এই রায় সেই দাবিকে দুর্বল করতে পারে এবং ডেমোক্র্যাটদের হাতে একটি বড় অস্ত্র তুলে দিতে পারে।
ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করবেন। আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, সুপ্রিম কোর্ট যদি ফেডারেল সার্কিটের রায় বহাল রাখে, তবে ভবিষ্যতে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের পক্ষে এককভাবে ট্যারিফ আরোপ বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতিতে কঠোর পরিবর্তন আনা কঠিন হয়ে যাবে।
ফলে এই রায় শুধু ট্রাম্প নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে বসা যেকোনো নেতার ক্ষমতার সীমা স্পষ্ট করে দিল। এখন নজর সবার সুপ্রিম কোর্টের দিকে—কী সিদ্ধান্ত আসে তা দেখার জন্য রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক মহল অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।