চীনা হ্যাকারদের একটি ব্যাপক সাইবার হামলা আমেরিকার প্রায় প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির আশঙ্কা তৈরি করেছে (Chinese Hackers)। এই হামলায় আমেরিকা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জেডি ভ্যান্স-এর ফোনের তথ্যও লক্ষ্য করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মাইক্রোসফট কর্তৃক ‘সল্ট টাইফুন’ নামে চিহ্নিত এই হ্যাকিং গ্রুপটি চীন সরকারের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। এই হামলা কেবল আমেরিকা নয়, বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশের টেলিকম নেটওয়ার্ক এবং পরিকাঠামোকে লক্ষ্য করেছে। এই ঘটনা সাইবার নিরাপত্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
২০২৪ সালের অক্টোবরে প্রথম জানা যায় যে, চীনা হ্যাকাররা ভেরিজন, এটিএন্ডটি এবং লুমেন টেকনোলজিসের মতো আমেরিকার প্রধান টেলিকম কোম্পানিগুলির নেটওয়ার্কে অনুপ্রবেশ করেছে। এই হামলায় ট্রাম্প এবং ভ্যান্স-এর ফোনের কল লগ, টেক্সট মেসেজ এবং সম্ভাব্য অডিও ডেটা লক্ষ্য করা হয়েছিল।
এছাড়া, ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ফোন এবং সিনেটর চাক শুমারের মতো উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদদের তথ্যও হ্যাকারদের লক্ষ্য ছিল। তবে, এই হামলায় কোন তথ্য চুরি হয়েছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত হয়নি।
এফবিআই এবং সাইবারসিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সি (সিআইএসএ) যৌথভাবে এই হামলার তদন্ত করছে। তদন্তকারীরা মনে করেন, হ্যাকাররা জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত সংবেদনশীল তথ্য, যেমন—আইনি ওয়্যারট্যাপিংয়ের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছিল।
এই হামলার মাধ্যমে হ্যাকাররা টেলিকম নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রিয়েল-টাইমে ফোন কথোপকথন এবং টেক্সট মেসেজ পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এফবিআই-এর প্রাক্তন সাইবার বিভাগের কর্মকর্তা সিনথিয়া কায়সার বলেছেন, “এই হামলার ব্যাপকতা এমন যে আমেরিকার প্রায় প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য চুরি হয়ে থাকতে পারে।”
এই হামলার পেছনে চীনের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, মিনিস্ট্রি অফ স্টেট সিকিউরিটির সঙ্গে সংযোগ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। হ্যাকাররা টেলিকম কোম্পানিগুলির পুরনো দুর্বলতাগুলির সুযোগ নিয়ে নেটওয়ার্কে প্রবেশ করেছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে এই হামলা চালিয়েছে।
এই হামলার মাধ্যমে তারা কেবল রাজনীতিবিদদের নয়, সাধারণ নাগরিক, সরকারি কর্মকর্তা, এবং ব্যবসায়ীদের তথ্যও সংগ্রহ করেছে। এই ধরনের তথ্য চীনা গোয়েন্দা সংস্থাগুলির জন্য অত্যন্ত মূল্যবান, কারণ এটি তাদের লক্ষ্যবস্তুর যোগাযোগ এবং গতিবিধি ট্র্যাক করতে সহায়তা করে।
চীনা হ্যাকারদের এই কার্যকলাপ আমেরিকার সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরেছে। এফবিআই-এর পরিচালক ক্রিস্টোফার রে এই হামলাকে চীনের ইতিহাসে “সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাইবার-গুপ্তচরবৃত্তি অভিযান” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, চীনের হ্যাকিং প্রোগ্রাম অন্যান্য প্রধান দেশগুলির তুলনায় অনেক বড়। এই হামলা শুধু আমেরিকার টেলিকম কোম্পানিগুলির উপর সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি জল সরবরাহ, বিদ্যুৎ গ্রিড এবং পরিবহন ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোকেও লক্ষ্য করেছে।
ট্রাম্প প্রচারণা দল এই হামলার জন্য বাইডেন প্রশাসন এবং কমলা হ্যারিসকে দায়ী করেছে, যদিও এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ট্রাম্পের মুখপাত্র স্টিভেন চুং বলেছেন, “এটি হ্যারিস এবং ডেমোক্র্যাটদের নির্বাচনী হস্তক্ষেপের অংশ।” অন্যদিকে, চীন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা সব ধরনের সাইবার হামলার বিরোধী এবং এই অভিযোগগুলি “ভিত্তিহীন”।
টিম কুকের ভারতে আইফোন তৈরির পরিকল্পনায় ফের রেগে গেলেন ট্রাম্প
এই ঘটনা আমেরিকার নির্বাচনের সময় বিদেশি হস্তক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। ইরান এবং রাশিয়ার পাশাপাশি চীনের এই হামলা বিশ্ব রাজনীতিতে সাইবার যুদ্ধের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তদন্তকারীরা এখনও এই হামলার পূর্ণাঙ্গ পরিধি এবং ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণের চেষ্টা করছে। এই ঘটনা আমেরিকা এবং তার মিত্রদের জন্য সাইবার নিরাপত্তা বাড়ানোর জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।