চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ বন্ধে আজ বৈঠক লন্ডনে

বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের (china) মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধ নিরসনের লক্ষ্যে সোমবার লন্ডনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট…

china america trade war

বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের (china) মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধ নিরসনের লক্ষ্যে সোমবার লন্ডনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তিন শীর্ষ সহযোগী – ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট, কমার্স সেক্রেটারি হাওয়ার্ড লুটনিক এবং ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ জেমিসন গ্রিয়ার – এই আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে একটি পোস্টে এই বৈঠকের ঘোষণা করেছেন, যদিও তিনি বিস্তারিত কোনও তথ্য প্রকাশ করেননি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে, চীনের ভাইস প্রিমিয়ার হি লিফেং ৮ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে থাকবেন এবং এই সফরের সময় চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য পরামর্শ প্রক্রিয়ার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ট্রাম্প বলেন, “বৈঠকটি খুব ভালোভাবে হবে।”

   

গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প চীনের (china) প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একটি বিরল নেতা-নেতা ফোনালাপ করেন, যা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা বাণিজ্য উত্তেজনা এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ নিয়ে বিরোধের মধ্যে সংঘটিত হয়। ট্রাম্প এবং শি পরস্পরের দেশে সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং এই সময়ের মধ্যে তাঁদের কর্মীদের আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

উভয় দেশই বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর চাপের মধ্যে রয়েছে, বিশেষত চীনের (china) গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানির উপর নিয়ন্ত্রণ, যেখানে চীন প্রভাবশালী উৎপাদক, এবং ট্রাম্পের মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারদের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের বিস্তৃত প্রচেষ্টার কারণে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন।

বাণিজ্য বিরোধের পটভূমি (china)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের (china) মধ্যে বাণিজ্য বিরোধ গত কয়েক মাস ধরে তীব্র আকার ধারণ করেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে চীনা আমদানির উপর ১৪৫% শুল্ক আরোপ করেন, যা চীনের পক্ষ থেকে ১২৫% প্রতিশোধমূলক শুল্কের দিকে নিয়ে যায়।

এই শুল্ক যুদ্ধ বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনকে ব্যাহত করেছে এবং আর্থিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। গত ১২ মে জেনেভায় উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য ত্রৈমাসিক শুল্ক হ্রাস করতে সম্মত হয়, যা বাণিজ্য যুদ্ধের তীব্রতা কিছুটা কমায়। তবে, তারপর থেকে উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। চীন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রেখেছে, যা মার্কিন গাড়ি, বিমান এবং প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য অপরিহার্য, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনে আমেরিকান প্রযুক্তি এবং শিল্প পণ্য রপ্তানি বন্ধ করেছে।

২০২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের (china) পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৯৫.৪ বিলিয়ন ডলার, যা যে কোনও বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে সবচেয়ে বড়। এই ঘাটতি কমাতে এবং আমেরিকান শ্রমিক, কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেওয়ার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন কঠোর বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করেছে। এছাড়াও, ফেন্টানাইল সংকট মোকাবিলা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছ থেকে এই মাদকের পূর্বসূরী রাসায়নিক রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর পদক্ষেপ দাবি করছে।

অর্জুনের ‘গণ্ডিব’ আকাশ যুদ্ধে ভারতকে শ্রেষ্ঠত্ব দেবে, ৩৫০ কিলোমিটার দূর থেকে শত্রুর স্টিলথ ফাইটারকে ধ্বংস করবে

Advertisements

লন্ডন বৈঠকের তাৎপর্য

লন্ডনের এই বৈঠকটি বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। বৈশ্বিক বাজার উৎকণ্ঠার সঙ্গে এই আলোচনার ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছে, কারণ এটি শুল্ক কমানো, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা এবং বাণিজ্য সম্পর্কের স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এক্স-এ পোস্ট অনুসারে, বাজারগুলো তাৎক্ষণিক কোনও চুক্তির আশা না করলেও, ট্রাম্প-শি ফোনালাপের পর অগ্রগতির লক্ষণ খুঁজছে।

চীনের (china) ভাইস প্রিমিয়ার হি লিফেং, যিনি বেইজিংয়ের প্রধান বাণিজ্য আলোচক, এই বৈঠকে চীনের প্রতিনিধিত্ব করবেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই বৈঠক চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য পরামর্শ প্রক্রিয়ার অংশ। উভয় পক্ষই বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতে এবং জেনেভা চুক্তির ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করেন, তাৎক্ষণিক সমাধানের সম্ভাবনা কম, এবং এই আলোচনা দীর্ঘমেয়াদী আলোচনার সূচনা হতে পারে।

বিশ্বব্যাপী প্রভাব

এই বাণিজ্য বিরোধের প্রভাব শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। চীনের (china) গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানির উপর নিয়ন্ত্রণ বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনকে ব্যাহত করছে, যা অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিক্স এবং প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, কারণ এটি আমদানি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর চাপ সৃষ্টি করছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে পড়েছে। ন্যাশনাল রিটেল ফেডারেশন জানিয়েছে, শুল্কের কারণে আমদানি কার্গো ট্রাফিক হ্রাস পেয়েছে, যা দোকানের তাক খালি হওয়ার এবং দাম বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করছে। ট্রাম্পের সমর্থক শ্রমিক শ্রেণি, যেমন লংশোরম্যান এবং ট্রাকাররা, শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। এই চাপ ট্রাম্প প্রশাসনকে শুল্ক কমানোর দিকে ঠেলে দিয়েছে, যা জেনেভা চুক্তির মাধ্যমে আংশিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

লন্ডন বৈঠকটি মার্কিন-চীন (china) বাণিজ্য সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এক্স-এ পোস্ট অনুসারে, চীন ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানির জন্য কিছু লাইসেন্স জারি করেছে, যা উত্তেজনা কমানোর একটি ইঙ্গিত। তবে, বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, একটি ব্যাপক চুক্তি অর্জনের জন্য মাসব্যাপী আলোচনার প্রয়োজন হতে পারে।

ট্রাম্পের আশাবাদ সত্ত্বেও, চীন (china) তার নীতিগত অবস্থানে অটল রয়েছে। শি জিনপিং ট্রাম্পকে তাইওয়ান ইস্যুতে সতর্ক থাকার এবং বাণিজ্য ব্যবস্থায় পিছু হটার পরামর্শ দিয়েছেন। উভয় নেতাই তাদের দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা আলোচনাকে জটিল করে তুলছে। তবে, নেতা-নেতা স্তরের যোগাযোগ এবং লন্ডন বৈঠক বাণিজ্য যুদ্ধের সমাধানের দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।