৩০০ জনের জীবনহানির পর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা সিরিয়ার

Ceasefire announces ceasefire

সিরিয়ার প্রেসিডেন্সি শনিবার একটি তাৎক্ষণিক ও ব্যাপক যুদ্ধবিরতির (Ceasefire) ঘোষণা করেছে। এই যুদ্ধ বিরতি দ্রুজ অধ্যুষিত সুয়েদা প্রদেশে কয়েক দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘোষণা কর হয়েছে। যাতে ৩০০-র বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার কার্যালয় এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেছে, সকল পক্ষকে এই যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণভাবে মেনে চলতে এবং সমস্ত এলাকায় শত্রুতা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

Advertisements

এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে যখন সিরিয়ার নতুন ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন সরকার সুয়েদায় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তির অধীনে হয়েছে। সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন যে শনিবার থেকে সুয়েদায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন শুরু হয়েছে।

এই সংঘর্ষের সূত্রপাত গত রবিবার থেকে, যখন সুয়েদা প্রদেশে দ্রুজ মিলিশিয়া এবং স্থানীয় বেদুইন উপজাতিদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। এই সংঘাতের পেছনে ছিল পারস্পরিক অপহরণ এবং আক্রমণ, যা একটি দ্রুজ ব্যবসায়ীর অপহরণের ঘটনার মাধ্যমে উস্কে দেওয়া হয়। সিরিয়ার সরকারী বাহিনী শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য হস্তক্ষেপ করলেও, তারা দ্রুজ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বেদুইন উপজাতিদের পক্ষ নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ইউকে-ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে যে এই সংঘর্ষে ৩০০-র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ৪ জন শিশু, ৮ জন নারী এবং ১৬৫ জন সৈন্য ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছে। এছাড়াও, সরকারী বাহিনী দ্রুজ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সংক্ষিপ্ত বিচারে মৃত্যুদণ্ড এবং বাড়িঘর লুটপাট ও পোড়ানোর মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

ইসরায়েল এই সংঘর্ষে হস্তক্ষেপ করেছে, দাবি করে যে তারা সিরিয়ার দ্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে এবং ইসরায়েলের সীমান্তের কাছে দক্ষিণ সিরিয়ার এলাকাগুলিকে নিরস্ত্রীকরণ করতে চায়। সোমবার থেকে ইসরায়েল সুয়েদায় সিরিয়ার সামরিক বাহিনী এবং দামেস্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে বিমান হামলা চালিয়েছে।

বুধবার ইসরায়েলি হামলায় দামেস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভবনের চারটি তল ধসে পড়ে এবং একজন নিহত ও ১৮ জন আহত হয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন যে এই হামলাগুলি সিরিয়ার সরকারী বাহিনীকে দ্রুজ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা

থেকে বিরত রাখতে এবং সীমান্ত এলাকায় ইসলামপন্থী যোদ্ধাদের উপস্থিতি রোধ করতে পরিচালিত হয়েছে। তবে, সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা ইসরায়েলের এই হস্তক্ষেপকে সিরিয়ার জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির প্রচেষ্টা হিসেবে সমালোচনা করেছেন।

এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণার আগে, মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাতে ঘোষিত একটি যুদ্ধবিরতি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভেঙে পড়ে। দ্রুজ ধর্মীয় নেতা শেখ ইউসেফ জারবু বুধবার একটি ভিডিও বার্তায় নতুন যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করলেও, আরেকজন প্রভাবশালী দ্রুজ নেতা শেখ হিকমত আল-হাজরি এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই বিভক্তি দ্রুজ সম্প্রদায়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ এবং নতুন সরকারের প্রতি তাদের অবিশ্বাসকে প্রকাশ করে।

Advertisements

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিও এবং মার্কিন দূত টম ব্যারাক জানিয়েছেন যে ইসরায়েল ও সিরিয়া একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে, যা তুরস্ক, জর্ডান এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের সমর্থন পেয়েছে।

ব্যারাক সকল পক্ষকে অস্ত্র নামিয়ে একটি “নতুন ও ঐক্যবদ্ধ সিরিয়ার পরিচয়” গড়ে তুলতে আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, সুয়েদার বাসিন্দারা এখনও ভয়ের মধ্যে রয়েছেন, এবং অনেকে শহর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে পালিয়ে গেছেন।

এই সংঘাত সিরিয়ার ভঙ্গুর পোস্ট-ওয়ার রাজনৈতিক রূপান্তরকে হুমকির মুখে ফেলেছে। গত ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে, নতুন সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে দ্রুজ, আলাওয়াইট এবং কুর্দদের মধ্যে আস্থা অর্জনের জন্য সংগ্রাম করছে। সুয়েদার এই সংঘর্ষ এই অবিশ্বাসকে আরও গভীর করেছে, এবং ইসরায়েলের হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) এই পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য সভায় মিলিত হয়েছে, যেখানে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন সিরিয়ার মাটিতে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে “বর্বর অপরাধ” এর নিন্দা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রতিটি ভারতীয় কৃষকের জন্য সেরা ১০টি অ্যাপ- রিভিউ ও সুবিধা

এই যুদ্ধবিরতি কতটা কার্যকর হবে তা এখনও অনিশ্চিত। সুয়েদার সংঘর্ষ সিরিয়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে, এবং আগামী দিনগুলিতে এই চুক্তির স্থায়িত্ব পরীক্ষিত হবে।