কানাডার বুকে আবারও বর্ণবিদ্বেষের ঘটনা সামনে এল। তবে এবার সেই ঘটনায় আশার আলো জ্বালালেন এক সাহসী তরুণী (Canadian woman)। টরোন্টোর টরোন্টো ট্রানজিট কমিশন (TTC)-এ কর্তব্যরত এক ভারতীয় কর্মী কাজ করতে গিয়েই এক দুর্বৃত্তের পক্ষ থেকে হেনস্থার শিকার হন। কিন্তু ঠিক তখনই এক সাদা মহিলা এগিয়ে এসে তাঁকে রক্ষা করেন। তাঁর দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারিত কয়েকটি বাক্য কেবল ওই ভারতীয় তরুণের পাশে দাঁড়ায়নি, বরং মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছে।
ঘটনাটি কীভাবে ঘটল
ভিডিওতে দেখা যায়, TTC-এর এক ভারতীয় সুপারভাইজারকে অনুমতি ছাড়াই ভিডিও করতে থাকে কিছু লোক। তাঁদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ কটূক্তি করতে থাকে, যা স্পষ্টতই বর্ণবিদ্বেষমূলক ইঙ্গিত বহন করছিল। পরিস্থিতি ক্রমশ অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে।
ঠিক সেই মুহূর্তে উপস্থিত এক সাদা মহিলা দৃঢ় ভঙ্গিতে সামনে এসে দাঁড়ান। তিনি উচ্চস্বরে বলেন—
“Leave him alone! Leave him alone. Really? He’s working! Get out of his face!”
তাঁর এই কঠোর প্রতিবাদে পরিস্থিতি খানিকটা শান্ত হয়। তবে তিনি এখানেই থেমে থাকেননি। উত্তেজনা ছুঁয়ে গেলে TTC সুপারভাইজার নিজে তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করলে ওই মহিলা বলেন—
“My boyfriend is Indian.”
এই অপ্রত্যাশিত উক্তি মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাকে নতুন মোড় দেয়। অনেকেই একে মজা করে “প্লট টুইস্ট অব দ্য ইয়ার” বলে আখ্যা দেন। কিন্তু এর গভীরে ছিল মানবিক সংহতি—অচেনা এক ভারতীয়ের জন্য একজন কানাডিয়ান নারীর প্রতিবাদ।
সামাজিক মাধ্যমে তুমুল প্রতিক্রিয়া
ঘটনার ভিডিও অল্প সময়েই ভাইরাল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে X (পূর্বে Twitter)-এ এটি ৫ লক্ষাধিক ভিউ পেয়েছে। নেটিজেনরা একবাক্যে প্রশংসা করেছেন মহিলার সাহসী পদক্ষেপের।
একটি জনপ্রিয় পোস্টে লেখা হয়েছিল—
“When a white racist tries to harass a hardworking Indian in Canada, a white woman comes to his defence. Indians have found their allies in this racism war.”
এই মন্তব্য যেমন সমর্থন পেয়েছে, তেমনি আরও বহু মানুষ বলেছেন, বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই শুধুমাত্র আক্রান্ত সম্প্রদায়ের নয়—এটি মানবতার লড়াই, যেখানে সবাই মিলে দাঁড়াতে হবে।
প্রাসঙ্গিক আরেকটি ঘটনা
এই ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগেই কানাডার পিটারবারো শহরে ঘটে গিয়েছিল আরেকটি চাঞ্চল্যকর বর্ণবিদ্বেষমূলক ঘটনা। এক ভারতীয় দম্পতিকে শপিং মলের পার্কিং লটে গাড়িসহ আটকে দেয় এক যুবক। শুধু তাই নয়, তিনি কুৎসা ও গালাগাল করতে শুরু করেন এবং প্রাণনাশের হুমকিও দেন।
ঘটনার ভিডিও সামনে আসার পর পিটারবারো পুলিশ ওই ১৮ বছর বয়সী যুবককে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে “মৃত্যু বা শারীরিক ক্ষতির হুমকি” দেওয়ার অভিযোগ আনা হয় এবং বিচার পর্যন্ত রিমান্ডে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। মামলার শুনানি সেপ্টেম্বরে হওয়ার কথা।
When a white racist tries to harass a hardworking Indian in Canada, a white woman comes to his defence. Indians have found their allies in this racism war.
pic.twitter.com/Z68rWLBFcp— Lord Immy Kant (@KantInEastt) September 2, 2025
সমস্যার গভীরতা
এই দুটি ঘটনা স্পষ্ট করে দিচ্ছে, কানাডার মতো বহুজাতিক ও বহুসংস্কৃতির দেশেও বর্ণবিদ্বেষ এখনো এক বড় সমস্যা। প্রবাসী ভারতীয়রা প্রায়ই কেবল তাঁদের চেহারা, ধর্মীয় প্রতীক বা সাংস্কৃতিক পরিচয়ের জন্যই হেনস্থার শিকার হন। বিশেষ করে টিকা, পাগড়ি বা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিত মানুষদের প্রায়ই আলাদা নজরে দেখা হয়।
তবে একইসঙ্গে এই ঘটনাগুলি আশার আলোও দেখায়। যেমন, টরোন্টোতে ওই নারী প্রমাণ করেছেন—মানবিকতা ও সহমর্মিতা দিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যায়। একক মানুষও পরিবর্তন আনতে পারে, যদি তার ভেতরে থাকে ন্যায়ের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস।
কানাডা দীর্ঘদিন ধরেই বহুসংস্কৃতির দেশ হিসেবে গর্বিত। কিন্তু বর্ণবিদ্বেষের ঘটনাগুলি মাঝে মধ্যেই সেই ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে। টরোন্টোর এই ভিডিও আবারও মনে করিয়ে দিল—মানবিক সংহতি ও সাহসী প্রতিবাদই পারে এই সমস্যার মোকাবিলা করতে।
একজন অচেনা ভারতীয় কর্মীর জন্য একজন কানাডিয়ান নারী যে ভাবে দাঁড়ালেন, তা শুধু ভাইরাল ভিডিও নয়, বরং মানবিকতার শক্তিশালী বার্তা। তাঁর ঘোষণা—“My boyfriend is Indian”—হয়তো মুহূর্তের মধ্যে হালকা মজা তৈরি করেছিল, কিন্তু মূলত তা ছিল সক্রিয় সংহতির প্রকাশ।
অতএব বলা যায়, বর্ণবিদ্বেষকে হারাতে দরকার নয় বড় বড় প্রচারাভিযান বা সরকারি স্লোগান—বরং দরকার সাধারণ মানুষের সাহসী কণ্ঠস্বর, যা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে কখনো পিছপা হয় না।