শাদমানির পর এবার নিহত ইরানের অস্ত্র স্থানান্তর ইউনিটের কমান্ডার বেহনাম শাহরিয়ারি

ইরান (Iran) ও ইসরায়েলের মধ্যে চলতে থাকা যুদ্ধের নবম দিনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডারদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন, যা ইরানের (Iran)…

Iran commander death

ইরান (Iran) ও ইসরায়েলের মধ্যে চলতে থাকা যুদ্ধের নবম দিনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডারদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন, যা ইরানের (Iran) সামরিক নেতৃত্বের উপর গুরুতর আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই হামলায় ইরানের কুদস ফোর্সের প্যালেস্টাইন কর্পসের প্রধান সাইদ ইজাদি এবং অস্ত্র স্থানান্তর ইউনিটের কমান্ডার বেহনাম শাহরিয়ারি নিহত হয়েছেন।

এছাড়াও, ইরানের (Iran) যুদ্ধকালীন চিফ অফ স্টাফ মেজর জেনারেল আলি শাদমানি, যিনি খাতাম-আল-আনবিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টার্সের প্রধান ছিলেন, তিনিও ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। এই ঘটনাগুলো ইরানের সামরিক কাঠামো এবং পারমাণবিক কর্মসূচির উপর ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু হামলার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

   

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ২১ জুন রাতে ইরানের কোম শহরে একটি নিরাপদ আশ্রয়ে সাইদ ইজাদি নিহত হন। ইজাদি কুদস ফোর্সের প্যালেস্টাইন কর্পসের প্রধান ছিলেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলের উপর হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

আইডিএফ-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ইজাদি ইরানের (Iran) ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এবং হামাসের মধ্যে সামরিক সমন্বয়ের জন্য দায়ী ছিলেন।” তিনি হামাসের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক জোরদার করতে এবং আর্থিক ও অস্ত্র সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ইজাদির মৃত্যু ইরানের প্রক্সি মিলিশিয়া নেটওয়ার্কের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

একই দিনে, ইসরায়েল পশ্চিম তেহরানে একটি গাড়িতে হামলা চালিয়ে বেহনাম শাহরিয়ারিকে হত্যা করে। শাহরিয়ারি কুদস ফোর্সের ইউনিট ১৯০-এর প্রধান ছিলেন, যিনি হিজবুল্লাহ এবং হামাসের মতো ইরানের প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর কাছে অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন। আইডিএফ জানিয়েছে, শাহরিয়ারি মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর জন্য অস্ত্র স্থানান্তরের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। তাঁর মৃত্যু ইরানের প্রক্সি নেটওয়ার্কের অস্ত্র সরবরাহ ক্ষমতাকে দুর্বল করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এর আগে, ১৭ জুন ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের যুদ্ধকালীন চিফ অফ স্টাফ মেজর জেনারেল আলি শাদমানি নিহত হন। শাদমানি তেহরানের (Iran) কেন্দ্রস্থলে খাতাম-আল-আনবিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টার্সে অবস্থান করছিলেন, যেখানে তিনি ইরানের যুদ্ধ পরিচালনার পরিকল্পনা অনুমোদন করছিলেন।

তিনি এই পদে মাত্র চার দিন আগে নিযুক্ত হয়েছিলেন, তাঁর পূর্বসূরি মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদ ১৩ জুন ইসরায়েলি হামলায় নিহত হওয়ার পর। শাদমানি ইরানের (Iran) সর্বোচ্চ সামরিক নেতা এবং সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যু ইরানের সামরিক নেতৃত্বের শৃঙ্খলাকে আরও অস্থিতিশীল করেছে।

ইসরায়েলের হামলায় এছাড়াও আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক নেতা নিহত হয়েছেন। ১৩ জুন ইসরায়েলের প্রথম হামলায় আইআরজিসি’র এরোস্পেস ফোর্সের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেহ নিহত হন, যিনি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির প্রধান ছিলেন এবং ২০২৪ সালের এপ্রিল ও অক্টোবরে ইসরায়েলের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য দায়ী ছিলেন।

Advertisements

একই দিনে, ইরানের (Iran) সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ জেনারেল মোহাম্মদ বাগেরি এবং আইআরজিসি’র কমান্ডার-ইন-চিফ হোসেইন সালামি নিহত হন। এই হামলাগুলো ইরানের সামরিক কাঠামোর শীর্ষ পর্যায়ে বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি করেছে।

ইসরায়েলের দাবি, এই হামলাগুলো ইরানের (Iran) পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সামরিক ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সম্ভাবনা ইসরায়েলের জন্য অস্তিত্বের হুমকি। আমরা এটি বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর।” ইরানের দাবি, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, কিন্তু ইসরায়েল এবং পশ্চিমা দেশগুলো এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইরানের (Iran) পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সরকারি বিবৃতি সীমিত। তবে, ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ৪৩০ থেকে ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে বেসামরিক নাগরিক, সামরিক কর্মকর্তা এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা রয়েছেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেছেন, “ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হলে আমরা পারমাণবিক আলোচনায় অংশ নেব না।”

মাইক্রোসফট বিনামূল্যে অনলাইন কোর্স অফার করছে, আবেদন করার পদ্ধতি জানেন?

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের (Iran) ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন কাঠামোর ও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, তারা ইরানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মোবাইল ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করেছে। তবে, ইরান পাল্টা হামলা হিসেবে ইসরায়েলে শতাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন নিক্ষেপ করেছে, যার ফলে ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন।

এই হামলাগুলো ইরানের (Iran) সামরিক নেতৃত্বের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। আয়াতুল্লাহ খামেনি তাঁর শীর্ষ কমান্ডারদের সুরক্ষার জন্য ইলেকট্রনিক যোগাযোগ বন্ধ করে একটি বিশ্বস্ত সহযোগীর মাধ্যমে নির্দেশনা দিচ্ছেন। ইরান জেনারেল আব্দোলরাহিম মৌসাভিকে নতুন চিফ অফ স্টাফ হিসেবে নিয়োগ করেছে, কিন্তু ক্রমাগত হামলা ইরানের সামরিক কৌশলকে জটিল করে তুলছে।

এই ঘটনাগুলো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তি শান্তি আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করলেও, তা এখনও সফল হয়নি। ইরানের প্রক্সি নেটওয়ার্ক এবং পারমাণবিক কর্মসূচির উপর ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকলে এই সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।