নিষিদ্ধ নয়, স্থগিত! হাসিনার দল নিয়ে ইউনূসের মন্তব্যে রাজনৈতিক ঝড়

ঢাকা: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক মন্তব্যে বিতর্কের ঝড়৷ মাথাচাড়া দিয়েছে নতুন রাজনৈতিক জল্পনা৷ রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি…

Yunus Awami League Validity

ঢাকা: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক মন্তব্যে বিতর্কের ঝড়৷ মাথাচাড়া দিয়েছে নতুন রাজনৈতিক জল্পনা৷ রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আওয়ামী লিগ এখনও বৈধ রাজনৈতিক দল, তবে আপাতত তাদের কার্যকলাপ স্থগিত রাখা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এও জানান, স্থগিতাদেশ ভবিষ্যতে প্রত্যাহার করা সম্ভব—“That’s a possibility।”

Advertisements

এই মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বছরের মে মাসে আওয়ামী লিগের কার্যক্রম সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে স্থগিত করে। এর পরপরই নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে। ফলে ইউনূসের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে অনেকেই কৌশলগত ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।

   

দ্ব্যর্থক বার্তা, দ্বিগুণ প্রশ্ন

ইউনূসের বক্তব্যে একদিকে নরম সুর শোনা গেলেও, অন্যদিকে আওয়ামী লিগের বিরুদ্ধে তার অভিযোগও তীব্র। তিনি বলেন, “তারা কোনো অনুশোচনা দেখায়নি, কোনো হত্যাকাণ্ডের দায় নেয়নি, বরং সবসময় অন্যকে দোষারোপ করছে।”

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল অবশ্য ইউনূসের মন্তব্যকে “কেবল তাত্ত্বিক” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনের আগে বা নিকট ভবিষ্যতে আওয়ামী লিগের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির বিচার প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

রাজনৈতিক সমীকরণে অস্থিরতা Yunus Awami League Validity

এমন সময়ে এই মন্তব্য আসছে যখন সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গিয়েছে—বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসেবে বিএনপি এগিয়ে রয়েছে। প্রায় ৩৯% মানুষ বিএনপিকে পরবর্তী সরকার গঠনের জন্য “সবচেয়ে উপযুক্ত” মনে করছেন। ২৮% জামায়াতে ইসলামিকে সমর্থন করেছেন এবং প্রায় ১৮% আওয়ামী লিগকে ভোট দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

শেখ হাসিনার পতনের পর ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) জনমনে কোনো সাড়া ফেলতে পারেনি; সমর্থনের অঙ্কে তারা ৫%–এর নিচেই রয়ে গিয়েছে। অথচ এই ছাত্ররাই ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সুপারিশ করেছিল।

কৌশল না ইউ-টার্ন?

ইউনূসের এই বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে—এটি কি তাঁর ইউ-টার্ন, নাকি কৌশলগত চাল? কারণ আওয়ামী লিগকে পুরোপুরি রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে সরিয়ে দিলে বিএনপি-র সামনে সুপারমেজরিটির পথ খুলে যেতে পারে। অথচ বিএনপি ও ইউনূসের সম্পর্ক খুব একটা মধুর নয় বলে ধারণা করা হয়। ফলে আওয়ামী লিগের সম্ভাব্য পুনরুজ্জীবনের ইঙ্গিত হয়তো বিএনপির উদ্দেশেই বার্তা।

জনতার প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশে সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই ইউনূসের মন্তব্যকে “বাউন্সার” আখ্যা দিয়েছেন। একদিকে আওয়ামী লিগের ওপর কড়া সমালোচনা, অন্যদিকে দলটি আবার ফিরতে পারে—এই দ্বৈত অবস্থানকে জনগণ দেখছেন হিসেবি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে।

আগামী ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ইউনূস আগেই ঘোষণা করেছেন। তার আগে এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।