‘ডাবল ক্রস’ করলেন সেনাপ্রধান? শেখ হাসিনার পতনের নেপথ্যে সিআইএ যোগ? বিস্ফোরক দাবি

Sheikh Hasina Ouster CIA Plot

কলকাতা: ঢাকা থেকে দিল্লি, দুই রাজধানিতেই এখন তীব্র আলোড়ন। শেখ হাসিনার পতনের পেছনে কি সত্যিই ছিল আন্তর্জাতিক গুপ্তচক্র? বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের এক বিস্ফোরক স্বীকারোক্তিতে নড়েচড়ে বসেছে রাজনৈতিক মহল। সদ্য প্রকাশিত হতে চলা বই ‘ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ: দ্য স্টোরি অব অ্যান আনফিনিশড রেভোলিউশন’-এ তিনি দাবি করেছেন, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় তথা বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ছিলেন “সিআইএ-র পকেটে”—আর তিনিই শেষমেশ হাসিনাকে “পিঠে ছুরি” মেরেছেন।

Advertisements

কামালের চাঞ্চল্যকর মন্তব্য

বইটি লিখেছেন দীপ হালদার, জয়দীপ মজুমদার ও শহিদুল হাসান খোকন; প্রকাশক জাগারনট। তাতে উদ্ধৃত হয়েছে কামালের চাঞ্চল্যকর মন্তব্য, “এটা ছিল এক নিখুঁত সিআইএ ষড়যন্ত্র, বহু বছর ধরে গড়ে ওঠা। আমরা বুঝতেই পারিনি যে ওয়াকার-উজ-জামান ইতিমধ্যেই তাদের মদতে চলে গেছেন। দেশের প্রধান সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই কিংবা বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই—কেউই প্রধানমন্ত্রীর কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছে দেয়নি। হয়তো তাদের শীর্ষস্তরও এতে জড়িত ছিল। সেনাপ্রধান নিজেই তো প্রধান ষড়যন্ত্রকারী।”

   

প্রশ্ন উঠেছে, কেন আমেরিকার এই আগ্রহ? কী স্বার্থে শেখ হাসিনার মতো দৃঢ় নেত্রীকে সরানোর চেষ্টা? কামালের উত্তর, “দুটি কারণ, প্রথমত, দক্ষিণ এশিয়ায় একাধিক শক্তিশালী নেতা থাকলে মার্কিন স্বার্থ বাধাগ্রস্ত হয়। মোদী, শি, হাসিনা, এই ত্রয়ীর যুগে সিআইএ-র জন্য জায়গা সংকীর্ণ। দ্বিতীয়ত, সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ, যেটি বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত মানচিত্রে এখন এক বিরল রত্ন।”

বৈশ্বিক শক্তি-সংঘাতের কেন্দ্রে

সেন্ট মার্টিনস, টেকনাফের দক্ষিণে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে, আর মায়ানমার উপকূল থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার। বঙ্গোপসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির প্রেক্ষিতে এই ছোট্ট দ্বীপ এখন বৈশ্বিক শক্তি-সংঘাতের কেন্দ্রে। শেখ হাসিনা এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, “যদি আমি সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ আমেরিকাকে ছেড়ে দিই, তাহলে ক্ষমতায় থাকার নিশ্চয়তা মিলবে। কিন্তু তাতে দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে যাবে।”

বইটিতে বর্ণিত হয়েছে দিল্লির এক হোটেলের কফিশপে সেই কথোপকথন, যেখানে উপস্থিত ছিলেন দুই আওয়ামী লীগ সাংসদও। হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী কামাল তখন বলেছিলেন, “যেভাবে অভিমন্যু কৌরবদের ঘেরাওয়ে প্রাণ হারিয়েছিল, ঠিক তেমনই হাসিনা নিজের বিশ্বাসভাজনের হাতেই পরাজিত হলেন। ওয়াকার মৌলবাদী গোষ্ঠী ও জামাত-ই-ইসলামির সঙ্গে গোপন আঁতাত করে সরকার উৎখাতের রণকৌশল তৈরি করেছিলেন।”

গোপন অভিযান

২০২৪ সালের জুনে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান ওয়াকার-উজ-জামান। মাত্র দু’মাস পর, ৫ আগস্ট, শেখ হাসিনাকে দেশছাড়া হতে হয়। কামালের ভাষায়, “এটাই ছিল তাঁর প্রথম গোপন অভিযান, যে নেত্রী তাঁকে সেনাপ্রধান করেছিলেন, তাকেই সরিয়ে দেওয়া।”

Advertisements

তাঁর আরও অভিযোগ, পাকিস্তানের আইএসআই তখন ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিল জামাতের সঙ্গে। তাদের প্রশিক্ষিত কিছু মানুষ ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে পড়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়। সেই অস্থিরতার মধ্যেই ওয়াকার প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছিলেন, “সবকিছু সেনাবাহিনী সামলাবে।” কিন্তু তার পরদিনই ইতিহাস ঘুরে যায়।

‘গুম’-অভিযানে জড়িত থাকার অভিযোগ

লেখক দীপ হালদারের মতে, “ওয়াকার ছিলেন শেখ হাসিনার নিজের পছন্দের সেনাপ্রধান। অথচ এখন তাঁর বিরুদ্ধে সিআইএ-র যোগসাজশের অভিযোগ। এই প্রকাশনা বাংলাদেশের রাজনীতিকে নতুন করে নাড়িয়ে দেবে।”

এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর ভিতরে চাপা উত্তেজনা। ১৫ জন অফিসারকে ‘গুম’-অভিযানে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। বিভাজনের আশঙ্কায় বাতিল হয়েছে ওয়াকার-উজ-জামানের সৌদি সফর।

বাংলাদেশের রাজনীতির এই অধ্যায় কেবল ক্ষমতা হারানোর কাহিনি নয়, এ এক জাতির অন্তর্গত বিশ্বাসভঙ্গের গল্প, যেখানে দেশ, সেনা ও সার্বভৌমত্বের সীমারেখা আজ আরও ঝাপসা হয়ে উঠছে।