ঢাকা: বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে ঝড় তুললেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূসকে ঘিরে গড়ে ওঠা ‘গণতন্ত্রের নায়ক’–চিত্রকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি বললেন, “ইউনূস কোনও নির্বাচিত নেতা নন, বরং এক অনির্বাচিত শাসক, যিনি সংবিধান ভেঙে দিচ্ছেন এবং সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে ব্যর্থ।”
বিভ্রম দ্রুত কাটছে
সিএনএন-নিউজ১৮–কে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার এই মন্তব্যে যেন এক নতুন রাজনৈতিক ভূকম্পন সৃষ্টি হয়েছে ঢাকায়। তাঁর অভিযোগ, আন্তর্জাতিক মহল ভুলভাবে ইউনূসের অর্থনৈতিক খ্যাতিকে গণতান্ত্রিক বৈধতার প্রতীক হিসেবে দেখেছে, কিন্তু “সেই বিভ্রম এখন দ্রুত কেটে যাচ্ছে।”
হাসিনা বলেন, “বিশ্ব এখন বুঝতে পারছে, ইউনূস কেবল একজন অর্থনীতিবিদ বা সমাজকর্মী নন, তিনি এমন এক প্রশাসনের শীর্ষে রয়েছেন, যার ভিতরেই সক্রিয় চরমপন্থী ও প্রতিহিংসাপরায়ণ শক্তি।”
চরমপন্থী উপদেষ্টাদের মুখোশ Sheikh Hasina Dr Yunus Challenge
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী সরাসরি অভিযোগ করেন, ইউনূস আসলে “চরমপন্থী উপদেষ্টাদের মুখোশমাত্র।” তাঁর কথায়, “তাঁর প্রশাসনের ভিতরে এমন সব শক্তি কাজ করছে, যারা প্রতিহিংসা ও সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে নীতি নির্ধারণ করছে। এর ফলে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার ও বৈষম্য বেড়েই চলেছে।”
হাসিনা প্রশ্ন তোলেন ইউনূসের রাজনৈতিক বৈধতা নিয়েও। “যিনি কখনও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি, তিনি কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন?” এই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, “ইউনূস কোনও গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের প্রতীক নন। বরং তিনি এমন এক অনির্বাচিত মুখ, যিনি এখন কোটি কোটি মানুষের সমর্থিত দল আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চাইছেন—যে দলটি অতীতে নয়বার জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসেছে।”
গণতান্ত্রিক কাঠামোর মূল ভিত্তির ওপর আঘাত
আওয়ামী লীগের উপর নিষেধাজ্ঞাকে শেখ হাসিনা দেখছেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর মূল ভিত্তির ওপর আঘাত হিসেবে। তাঁর ভাষায়, “একটি দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা মানে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া। এটি গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত।”
সাক্ষাৎকারের শেষাংশে হাসিনা পশ্চিমা দেশগুলিকে স্পষ্ট সতর্কবার্তা দেন। তিনি বলেন, “যদি পশ্চিমারা মনে করে ইউনূস তাঁদের বন্ধুসুলভ মুখ, তবে তারা প্রতারিত হচ্ছে। তাঁর প্রযুক্তিনির্ভর ভাবমূর্তি কোনওভাবেই গণতান্ত্রিক বৈধতার প্রতীক নয়।”
বিপন্ন গণতন্ত্র
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর দাবি, “আজ যে অন্তর্বর্তী প্রশাসন ইউনূসের নামে চলছে, সেটি সংবিধান, গণতন্ত্র ও সংখ্যালঘু নিরাপত্তা, সবকিছুকেই বিপন্ন করছে। তিনি আসলে এমন এক অনির্বাচিত ক্ষমতার প্রতিনিধি, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গভীর সংকেত বহন করছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার এই বক্তব্য বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাকে নাড়া দিতে পারে। তাঁদের ধারণা, তাঁর এই মন্তব্য শুধু ইউনূসের ব্যক্তিগত নেতৃত্ব নয়, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক স্থিতির উপরও গভীর প্রভাব ফেলবে।


