১৯৭১ সালের ঐতিগাসিক ডিসেম্বর মাস – তখনও বাংলাদেশ নামে কোনও দেশের জন্ম হয়নি। পাকিস্তান থেকে ছিন্ন হবার জন্য রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধ চলছিল। (Sheikh Hasina) তবে ভারতীয় ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ আক্রমণে ততকালীন পূর্বপাকিস্তানের মাটিতে পাক সেনা পিছু হটছিল। এই অবস্থায় কলকাতায় থাকা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার বারবার ভারত সরকারের কাছে কূটনৈতিক স্বীকৃতির অনুরোধ করে। বিদেশনীতির যাবতীয় আইন খনিজ দেখে ততকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সময় নিচ্ছিলেন। কারণ, ভারত সরকার স্বীকৃতি দিলে পাকিস্তানের তরফে রাষ্ট্রসংঘে বলা সহজ হবে ভারতের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক স্বীকৃতিতে ভুটানের ভূমিকা:
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলছিল। ডিসেম্বরের শীতল সকালে পদ্মাপারের বাংলায় পাক সেনা একের পর এক ঘাঁটি হারিয়ে ঢাকায় কেন্দ্রীভূত হচ্ছিল। তেমনই এক দিন ৬ ডিসেম্বর বিশ্ব চমকে গেল ক্ষুদ্র অতি ক্ষুদ্র দেশ ভুটানের ভূমিকায়। কলকাতা সফররত ভুটানের রাজা জিগমে দোরজি ওয়াংচুক প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের দফতরে টেলিগ্রাম পাঠিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে কূটনৈতিক মান্যতা দিলেন। যুদ্ধে ভুটান ছিল নিরপেক্ষ। ফলে কাটল বিদেশ নিয়মের জট। এ দেশের তরফে বাংলাদেশ স্বীকৃতি পেতেই বেশি দেরি করেনি ভারত। সেদিনই ভারতের তরফে বাংলাদেশ পেল কূটনৈতিক স্বীকৃতি। অর্থাৎ দুটি দেশের কূটনৈতিক স্বীকৃতি পেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মঞ্চে আত্মপ্রকাশের সুযোগ পেল। বিখ্যাত সেই ৬ ডিসেম্বরেই জন্ম ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের।
ঐতিহাসিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি দানের সেই ৬ ডিসেম্বরের দশদিনের মাথায় ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি সেনা পরাজিত হয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এবার নবগঠিত বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিতে থাকে সোভিয়েত ইউনিয়ন,ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ।
হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়তেই মুক্তি পাচ্ছেন খালেদা জিয়া
দিল্লি-ঢাকা বন্দি বিনিময় চুক্তি
১৯৭১ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হলেও নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যে ছিল না কোনও বন্দি বিনিময় চুক্তি। ফলে দুদেশের মধ্যে থাকা অনুপ্রবেশকারীদের নিজ নিজ দেশে বিচার ব্যবস্থার অধীনে আনা সম্ভব হত না।এই জটিলটা চলে টানা চার দশকের বেশি। ২০১৩ সালে দুই দেশের মধ্যে বন্দি বিনিময় বা বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি সম্পাদিত হয়।
বন্দি বিনিময় চুক্তির বলে ভারত ও বাংলাদেশ তাদের নজরে ‘দোষী’ ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব অনুযায়ী একে অন্যের মধ্যে বিনিময় করতে পারে। চুক্তির বলে মোস্ট ওয়ান্টেড আলফা জঙ্গি নেতা (অসম) অনুপ চেতিয়া যে বাংলাদেশে বন্দি ছিল তাকে দাবি করে ভারত। দাবি মেনে বাংলাদেশ সরকার এই জঙ্গিকে ভারতে পাঠায়। একইভাবে বাংলাদেশ সরকারের নজরে ‘দোষী’ মাজেদ যে বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত তাকে ভারত সরকার ঢাকার কাছে প্রত্যর্পণ করে। এরকম বিনিময় আরও হয়েছে।
ভারতে ঢুকে পড়া শেখ হাসিনার কী হবে?
বাংলাদেশে গণবিক্ষোভের মুখে পলাতক ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ভারতে ঢুকেছেন। তাঁকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিলে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের নতুন সরকার শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে। কারণ, গণবিক্ষোভ দমনে বাংলাদেশ বহু মানুষের মৃত্যুর জেরে হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলা করবে বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। সেই মোতাবেক শেখ হাসিনাকে ভারতের কাছ থেকে চাইবে বাংলাদেশ। হাসিনার বন্ধুত্ব নাকি কূটনৈতিক বন্ধুত্ব দোটানায় ভারত। বিদেশনীতির নিয়মে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেবে ভারত। এরপরই হাসিনাকে নিয়ে ঢাকা-দিল্লির দড়ি টানাটানি শুরুর সম্ভাবনা। তাঁকে বাংলাদেশে পাঠালে মৃত্যুদণ্ডের সাজার বেশি সম্ভাবনা।
জনতার ভয়ে ‘পলাতক’ শেখ হাসিনা, পুত্র জয় বললেন- ‘মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না’
কূটনৈতিক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে শেখ হাসিনা চাইলেও তাঁর নিরাপত্তার কারণে ভারত তাকে জায়গা দিতে অপারত। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বাঁচানোর জন্যই শেখ হাসিনাকে অন্য কোনও নিরাপদ ঠিকানার ব্যবস্থা করা হবে। সেক্ষেত্রে এমন কোনও দেশ যার সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই সেই দিকটি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
ভারতে আগেও নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছিলেন হাসিনা
১৯৭৫ সালে শেখ হাসিনার পিতা ও ততকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশেরই সেনাবাহিনীর একাংশ খুন করেছিল। ঢাকায় সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন মুজিবুর রহমান। তবে দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা যেহেতু বিদেশে ছিলেন তাই বেঁচে গেছিলেন। তাঁদের ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। নয়াদিল্লিতেই স্বামী, পুত্র কন্যা ও বোনকে নিয়ে থাকতেন হাসিনা। তখন যে পরিস্থিতি ছিল এখন তা সম্পূর্ণ বিপরীত।