সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ! বাংলাদেশে ঠিক কী কী সম্পত্তি রয়েছে হাসিনার?

Sheikh Hasina Asset Forfeiture

জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সম্পদ-তালিকা নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল রায়ে শুধু ফাঁসির নির্দেশই দেয়নি, সঙ্গে তাঁদের সমুদয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশও দিয়েছে। ফলে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে—আসলে কতটা বিস্তৃত ছিল এই দুই প্রভাবশালী নেতার আর্থিক সাম্রাজ্য?

Advertisements

এ প্রশ্নের উত্তর মিলছে ২০২৪ সালের নির্বাচনী হলফনামা থেকে, যা উদ্ধৃত করেছে বাংলাদেশের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-৩ আসনে হাসিনা এবং ঢাকা-১২ আসনে কামাল প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনের আগে দু’জনই তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পদ সম্পর্কে বিস্তারিত হলফনামা দাখিল করেছিলেন—সেই নথিই এখন মুখ্য দলিল।

   

হাসিনা: স্থাবর–অস্থাবর মিলিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ

হলফনামা অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা নিজের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মোট মূল্য দেখিয়েছিলেন ৪ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা।

  • তাঁর হাতে নগদ অর্থ ছিল মাত্র ২৮,৫০০ টাকা,
  • ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত প্রায় ২ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা,
  • সঞ্চয়পত্র ২৫ লক্ষ টাকা,
  • স্থায়ী আমানত ৫৫ লক্ষ টাকা।

ব্যক্তিগত গাড়ির তালিকায় রয়েছে তিনটি গাড়ি—এর মধ্যে একটি উপহারে পাওয়া, বাকি দু’টির সম্মিলিত মূল্য প্রায় ৪৭.৫ লক্ষ টাকা। অলঙ্কার হিসেবে রয়েছে ১৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার সোনা ও অন্যান্য ধাতুর গহনা। আসবাবপত্র ও গৃহস্থালী সামগ্রী মিলিয়ে মূল্য প্রায় ৭.৫ লক্ষ টাকা।

স্থাবর সম্পত্তির বিচারে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল কৃষিজমি ও বসতবাড়ি: Sheikh Hasina Asset Forfeiture

  • টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর ও রংপুরে মোট ১৫.৩ বিঘা কৃষিজমি,
  • টুঙ্গিপাড়ায় তিনতলা একটি বাড়ি,
  • গাজীপুরের মৌচাকে ৯ বিঘা জমির উপর বাগানবাড়ি—যার মালিকানা ভাগে রয়েছে হাসিনা, শেখ রেহানা এবং তাঁদের সন্তানরা,
  • ঢাকার পূর্বাচলে ৩৫ লাখি মূল্যের জমি।

এ ছাড়াও, অভিযোগ রয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মুজিব পরিবারের ছ’জন সদস্য পূর্বাচলে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠা জমি ‘অনৈতিকভাবে’ অধিগ্রহণ করেছিলেন—যা নিয়ে চলমান মামলা-মোকদ্দমাও রয়েছে।

তাঁর বিরুদ্ধে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ—২০০৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় সম্পত্তির তথ্য গোপন করা। অভিযোগকারীদের দাবি, ওই সময়ে তিনি নিজের নামে ২৮ একর স্থাবর সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও দেখিয়েছিলেন মাত্র ৬.৫০ একর।

Advertisements

আসাদুজ্জামান খান কামাল: সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটিরও বেশি

প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সম্পদও কম বিস্তৃত নয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী—

  • স্থায়ী আমানত ও সঞ্চয়ে ছিল ২ কোটি ১ লক্ষ টাকা,
  • ব্যাঙ্কে জমা ৮২ লক্ষ টাকা,
  • বন্ড ও শেয়ার ২৪ লক্ষ টাকার,
  • নগদ অর্থ ৮৪ লক্ষ টাকা।

কামালের রয়েছে দুটি গাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য দেড় কোটি টাকারও বেশি। গৃহস্থালি সামগ্রী, আসবাবপত্র ও বৈদ্যুতিন দ্রব্য মিলিয়ে মূল্য প্রায় ২ লক্ষ টাকা। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ৫ বিঘার বেশি কৃষিজমি, দুটি বাড়ি ও একটি অ্যাপার্টমেন্ট। সব মিলিয়ে হিসাব দাঁড়ায়—কমপক্ষে ১০ কোটি ২৫ লক্ষ টাকার সম্পদ।

রায়ের পর প্রশ্ন আরও তীব্র

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশের পর এই হলফনামাভিত্তিক সম্পদ তথ্য এখন নতুন রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে। বিশেষ করে অভিযোগ, ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়ম, সম্পত্তি গোপন, এবং ক্ষমতার অপব্যবহার, এসব নিয়ে দেশটির অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যেই তদন্ত জোরদার করেছে।

জুলাই হত্যাকাণ্ডের রায়ের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আরও উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। এখন নজর সবার—পরবর্তী আইনি লড়াই কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া কোন পথে এগোয়।