আদিবাসী কিশোরীকে অপহরণ করে ধর্ষণ মুহাম্মদ আলীর! উদাসীন পুলিশ

netrakona-tribal-girl-abduction-assault

ঢাকা: নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার গুছাগ্রামে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে গিয়েছে। ৭ অক্টোবর রাতে মুহাম্মদ আলী (৬০) নাম এক ব্যাক্তি গারো সম্প্রদায়ের এক কিশোরীকে অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। শিকারীর পরিবার দুর্গাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশের কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে, ভয়ে কাঁপছে নির্যাতিতার পরিবার এবং স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ।

Advertisements

এই ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং বাংলাদেশের আদিবাসী নারীদের প্রতি চলা হিংসা ও প্রশাসনিক উদাসীনতার একটি করুণ চিত্র তুলে ধরেছে।গুছাগ্রাম গ্রামটি নেত্রকোনা জেলার একটি প্রান্তিক এলাকা, যেখানে গারো সম্প্রদায়ের মানুষরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করে আসছে। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা মূলত খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এবং তাদের জীবিকা নির্ভর করে কৃষি ও বনজ সম্পদের উপর।

দর্শনার্থীদের সুবিধায় কালীপুজোয় বারাসত পুলিশের ডিজিটাল উদ্যোগ

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই শান্তিপূর্ণ জীবনযাত্রায় ক্রমাগত হস্তক্ষেপ ঘটছে। মুহাম্মদ আলী নামক এই ব্যক্তি স্থানীয়ভাবে একজন আয়ুর্বেদ চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত। তিনি গ্রামের অনেককে ওষুধপত্র দিয়ে চিকিৎসা করেন, যার মধ্যে শিকারীর বাবাকেও অন্তর্ভুক্ত। নির্যাতিতার বাবা দীর্ঘদিন ধরে তার কাছে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এই বিশ্বাসের সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে আলী নির্মমভাবে পরিকল্পনা করে অপরাধ সাধন করেছেন বলে অভিযোগ।

ঘটনার রাতে, শিকারী কিশোরী তার বাড়ির কাছাকাছি ছিল। হঠাৎ মুহাম্মদ আলী তার কাছে এসে কথা বলতে শুরু করেন। পরিবারের লোকেরা অন্যরকম কাজে ব্যস্ত থাকায় তাকে সন্দেহ করেনি। কিন্তু আলী কিশোরীকে জোর করে অপহরণ করে নিয়ে যান এবং একটি নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এই ঘটনা শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও কিশোরীকে ধ্বংস করে দিয়েছে। পরদিন সকালে কোনোমতে বাড়ি ফিরে আসা কিশোরীর অবস্থা দেখে পরিবারের লোকেরা হতবাক।

Advertisements

তারা তৎক্ষণাত দুর্গাপুর থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে আলী কিশোরীকে ধর্ষণ করেছেন এবং তাকে হুমকি দিয়ে চুপ থাকতে বাধ্য করেছেন। কিন্তু থানা কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল চল্লাশ। কোনো তদন্ত শুরু হয়নি, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়নি এবং এমনকি একটি সাধারণ জিআইআর রেকর্ড করা হয়নি বলে পরিবারের অভিযোগ।

নির্যাতিতার পরিবারের অবস্থা এখন দুর্বিষহ। নির্যাতিতার মা বলেছেন কিশোরী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে; সে রাতে ঘুমাতে পারে না, খাবার গিলতে পারে না। তিনি বলেছেন “আমার মেয়ে ছিল আমাদের আশার আলো। এখন সে একটা ছায়ার মতো হয়ে গেছে। পুলিশ যদি অভিযুক্তকে ধরে না, তাহলে আমরা কোথায় যাব?” বাবা, যিনি আলীর চিকিৎসায় বিশ্বাস করতেন, এখন বিশ্বাসঘাতকতার শিকার।

পরিবারের সদস্যরা রাতে দরজা-জানালা বন্ধ করে থাকেন, কারণ আলী এখনও গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং হুমকি দিচ্ছেন। স্থানীয় গারো সমাজের নেতারা বলছেন, এই ঘটনা পুরো সম্প্রদায়কে ভয় পাইয়ে দিয়েছে। অনেক মেয়ে এখন বাইরে যেতে ভয় পায়, এবং পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছে। একজন বয়স্ক গারো নেতা বললেন, “আমরা শতাব্দী ধরে এই ভূমিতে বাস করছি, কিন্তু এখন আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে? ইসলামপন্থী উগ্রবাদীরা আমাদের উপর আক্রমণ করছে, আর পুলিশ চুপ।”