ফের ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসায়নেস (ISKCON)-এর উপর নিষেধাজ্ঞার দাবিতে উত্তাল বাংলাদেশ। ইসলামপন্থীদের অভিযোগ, ইসকন একটি ‘চরমপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন’। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর ঢাকা, চট্টগ্রামসহ একাধিক শহরে বিশাল মিছিল ও বিক্ষোভে এই দাবি জোরালোভাবে উঠেছে।
ইন্তিফাদা বাংলাদেশ নামের সংগঠনটি ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের বাইরে সমাবেশ করে ছয় দফা দাবি তোলে, যার অন্যতম ছিল ইসকনের উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা আরোপ। সমাবেশে ধর্মীয় সংগঠনটির বিরুদ্ধে তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়।
ইসকনকে ‘ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন’ তকমা
অভিযোগ, সম্প্রতি এক রিট পিটিশনের জবাবে মহম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার ইসকনকে ‘ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর পর থেকেই দেশে হিন্দু মন্দির ও ইসকন কেন্দ্রগুলিতে হামলার ঘটনা বেড়েছে বলে জানা গিয়েছে। এমনকি ইসকনের এক প্রাক্তন সদস্য কৃষ্ণ দাস প্রভুকে গত আগস্ট মাসে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, ইউনূস সরকারের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, হত্যাকাণ্ড এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক আকার নিচ্ছে। সরকার অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে। কিন্তু বিভিন্ন ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর উত্থান ও রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় নিয়ে ক্রমবর্ধমান মৌলবাদী প্রভাব নিয়ে দেশজুড়ে শঙ্কা বাড়ছে।
ইসলামের নেতৃত্বে বড় সমাবেশ ISKCON Ban Bangladesh
একই দিনে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেটেও হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে বড় সমাবেশ হয়। সেখান থেকেও ইসকনকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।
ইসলামপন্থী নেতা ও আল-কায়েদা-সংশ্লিষ্ট আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) প্রধান জসিমুদ্দিন রহমানি, যিনি একসময় সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন, তিনিও সরকারকে ইসকনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানিয়েছেন। ঢাকার দৈনিক দেশ রূপান্তর-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রহমানির বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে, “ইসকন কোনো হিন্দু সংগঠন নয়, এটি ইহুদিদের দ্বারা গঠিত এক চরমপন্থী সংগঠন। তারা বারবার অপরাধ করছে। ইসকনকে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি।”
আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ
রহমানি ২০২৪ সালের আগস্টে, মহম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর, মুক্তি পান কারাগার থেকে। এরপর থেকে তাঁর মতো ইসলামপন্থী নেতাদের পুনরুত্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে।
ইন্তিফাদা বাংলাদেশের সদস্য আহমেদ রফিক বলেন, “যখন কোনও ইমাম ইসকনের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তখন তাঁকে অপহরণ করে মারধর করা হয়। অথচ রাষ্ট্র নীরব থাকে, অপরাধীদের বিচার থেকে বাঁচিয়ে দেয়। সরকার এখন আল্লাহ কী বলবেন তা নয়, বরং আমেরিকা ও বিদেশি দূতাবাস কী বলবে, তাই নিয়ে বেশি চিন্তিত।”
বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ও সংখ্যালঘু সুরক্ষার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইতিমধ্যেই সমালোচনা তীব্র হচ্ছে। বিশেষত, মহম্মদ ইউনূস সরকারের ক্ষমতায় আসার পর ইসলামপন্থীদের উত্থান এবং সংখ্যালঘুদের উপর হামলার খবর ক্রমেই চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে।


