বাংলা-পাক সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা কী ভারতের জন্য নয়া উদ্বেগের কারণ?

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য নয়া উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর, যখন বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে মুক্তি পায়, দুই দেশের…

Mohhammed Yunus

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য নয়া উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর, যখন বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে মুক্তি পায়, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ছিল শীতল। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ও পাকিস্তান মধ্যে বাড়ছে অর্থনৈতিক, কৌশলগত এবং সামরিক সম্পর্ক, যা ভারতের জন্য ভবিষ্যতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

গত বছরের আগস্টে যখন বাংলাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন, এরপর ওই দেশের প্রতিবাদকারীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভেঙে দেয় । মুজিবুর রহমান, যিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন এবং ভারতের সাহায্যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের কাছ থেকে মুক্ত করিয়েছিলেন, তার ঐতিহ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এখনও জীবিত। এই মূর্তিটি ভাঙা অনেকেই একটি প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, যা পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘদিন বাদে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত।

kolkata24x7-sports-News

   

বাংলাদেশের ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণ হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী সরকারের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বন্ধ করতে না পারা, বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি আক্রমণ। এর পর থেকেই বাংলাদেশে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

পাকিস্তানের ‘হারানো ভাই’ বাংলাদেশ

ইউনুসের অস্থায়ী সরকার, যা মৌলবাদী জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছে, পাকিস্তানের প্রতি স্নেহ প্রকাশ করতে শুরু করেছে। পাকিস্তানকে ‘হারানো ভাই’ হিসেবে উল্লেখ করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক ডার সম্প্রতি ঢাকা সফরের কথা বলেছেন, যা বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক আরও মজবুত করার লক্ষ্যে হতে পারে।

এছাড়াও গত বছর এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে, ৫৩ বছর পর প্রথমবারের মতো করাচি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানের একটি কার্গো জাহাজ পৌঁছায়। এটি ছিল পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি সমুদ্রপথের প্রথম সংযোগ। এটি ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য কাজ করছে।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একে অপরের মধ্যে সমুদ্রবাণিজ্য সম্পর্ক আরও মজবুত করার পরিকল্পনা করছে। পাকিস্তান থেকে ২৫ মেট্রিক টন চাল নিয়ে একটি পাকিস্তানি কার্গো জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে এবং তার পর তা বাংলাদেশের মংলা বন্দরে যাবে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে এই সমুদ্রপথ বাণিজ্য সম্পর্কের বিস্তার ভারতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

সামরিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সম্পর্কও সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ সম্প্রতি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছে এবং পাকিস্তান থেকে কর্মকর্তাদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা পরিদর্শন করিয়েছে। এর মধ্যে একটি বড় ঘটনা ছিল জানুয়ারিতে, যখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসান পাকিস্তান সফর করেন এবং দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

এরপর পাকিস্তান একটি গোয়েন্দা প্রতিনিধিদল ঢাকায় পাঠায়। ৪ সদস্যের এ দলটি বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করেছে, যা ১৫ বছর পর নতুন করে শুরু হয়েছে।

ভারতের জন্য চিন্তার কারণ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সম্পর্কের গভীরতা বাড়ানোর পাশাপাশি, বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। পাকিস্তান, জামায়াতে ইসলামের সহযোগিতায় বাংলাদেশের ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের সাহায্য করছে, যা ভারতের নিরাপত্তা পরিসরে একটি নতুন হুমকি সৃষ্টি করছে। ভারতীয় সেনাপ্রধান, জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে, পাকিস্তানের সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা যদি বাংলাদেশে থেকে ভারতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করেন, তবে তা ভারতের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হতে পারে।

তুরস্কের সঙ্গে সহযোগিতা

সম্প্রতি এক নয়া উদ্বেগের সৃষ্টি হচ্ছে, তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্ভাব্য সহযোগিতা। সম্প্রতি জানা গেছে যে, বাংলাদেশ তার সেনাবাহিনীতে তুর্কি তৈরি টিবি ২ বায়রাক্তার ড্রোন ব্যবহার করছে। যা ভারতীয় সীমান্তে নজরদারি কার্যক্রমে নিযুক্ত রয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দারা এই ড্রোনগুলির চলাফেরা মনিটর করছে এবং এগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

ভারত এই অঞ্চলের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং যে কোনও পরিস্থিতিতে জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সমস্ত কর্মকাণ্ডের উপর নজর রাখছে এবং কোনও রকম নিরাপত্তা হুমকি দেখা দিলে তা মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে, বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কী ধরনের সম্পর্ক তারা ভারত সঙ্গে চায় এবং ভারত কীভাবে বাংলাদেশকে দেখতে চায়। ভারতের অবস্থান স্পষ্ট, এবং তাদের সীমান্তে যে কোনও ধরনের নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত।