বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অভূতপূর্ব অনিশ্চয়তার প্রহর। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সোমবার রায় ঘোষণা করবে সে দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT)। বহুল আলোচিত এই মামলার রায় সরাসরি সম্প্রচার করার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে—যা নিজেই এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ। দেশের ভিতরে- বাইরে নজর এখন ঢাকার ট্রাইব্যুনালের দিকেই।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি—মৃত্যুদণ্ড—চাওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ স্পষ্ট জানিয়েছে, ট্রাইব্যুনালের রায় যাই হোক, তা মানতেই হবে। কারণ অভিযুক্ত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পলাতক অবস্থায় রয়েছেন; সে অবস্থায় রায়ের বিরুদ্ধে কোনও আবেদন করার অধিকার তাঁর নেই—এ তথ্যও জোর দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গাজি মোনাওয়ার।
কোন পাঁচটি অভিযোগে বিচারাধীন হাসিনা?
মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট পাঁচটি অভিযোগে বিচার মুখোমুখি শেখ হাসিনা। একই মামলার অভিযুক্ত আরও দু’জন—বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং প্রাক্তন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লা আল-মামুন।
হাসিনা ও আসাদুজ্জামান প্রথম থেকেই পলাতক; সূত্রের দাবি, দু’জনই ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তৃতীয় অভিযুক্ত আল-মামুনকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশ পুলিশ। পরে তিনি রাজসাক্ষী হন এবং আদালতে জবানবন্দি দেন। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগগুলিতে তিনি সরাসরি সায় দিয়েছেন।
অভিযোগগুলির মূল কেন্দ্রবিন্দু— ICT to deliver verdict on Sheikh Hasina
২০২৪ সালের জুলাই মাসে সরকারবিরোধী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সময় পুলিশের উপর গুলি চালানোর নির্দেশ allegedly প্রদান করেছিলেন হাসিনা।
হেলিকপ্টার, ড্রোন ও অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলন দমন করার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও দাবি রাষ্ট্রপক্ষের। অভিযোগ, ওই সময় দেড় হাজার মানুষ নিহত হন।
উস্কানিমূলক ভাষণ, যার ফলে দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল—এ অভিযোগও রয়েছে।
সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলির মধ্যে রয়েছে—
- রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের গুলি করে হত্যা, যা আন্তর্জাতিক মহলেও তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়।
- ঢাকার চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত ছ’জনকে গুলি করে হত্যা, যেখানে পুলিশ যে নির্দেশে গুলি চালিয়েছিল, তা হাসিনা দিয়েছিলেন—এ অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষের।
- আশুলিয়ায় ছ’জনকে পুড়িয়ে হত্যা, যা নিয়েও সরাসরি নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হাসিনার বিরুদ্ধে।
কেন আবেদন করতে পারবেন না শেখ হাসিনা?
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গাজি মোনাওয়ারের বক্তব্য, “হাসিনা পলাতক। তাই আইনের চোখে তিনি আপিল করার যোগ্যতা হারিয়েছেন।”
বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী—
- ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করা যায়।
- কিন্তু সেই আপিল করতে হলে অভিযুক্তকে আত্মসমর্পণ করতে হবে, বা পুলিশকে তাকে হেফাজতে নিতে হবে।
- হাসিনা যেহেতু দেশের বাইরে, পুলিশ তাঁর হেফাজত পায়নি। তাই আইনের পরিভাষায় তিনি ফরার, এবং ফরার অবস্থায় কেউই আপিল করতে পারেন না।
হাসিনা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন—জুলাই আন্দোলনে তিনি কখনও হত্যার নির্দেশ দেননি। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে তাঁর এই বক্তব্যের কোনও মূল্য নেই। কারণ আইনের নিয়ম বলছে, গণমাধ্যমে দেওয়া মন্তব্য আদালত গ্রহণযোগ্য নয়।
অভিযুক্তকে সশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য জানাতে হয়, তবেই তা গ্রাহ্য হয়। রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে, হাসিনার কণ্ঠস্বরের অডিও রেকর্ড উন্মুক্ত আদালতে বাজিয়ে শোনানো হয়েছে। সেই রেকর্ডকে প্রমাণ হিসেবেই ব্যবহার করেছে ট্রাইব্যুনাল।
ঢাকা ও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আজ ট্রাইব্যুনালে
বাংলাদেশে রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই এই রায় নতুন একটি অধ্যায় খুলতে চলেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আক্রমণাত্মক অবস্থান, রাষ্ট্রপক্ষের দাবির তীব্রতা এবং পলাতক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ—সব মিলিয়ে আজকের রায় রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নির্ধারক মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে।
রায় ঘোষণার পরপরই দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আবারও অস্থির হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। সব নজর এখন ঢাকার ট্রাইব্যুনালের দিকেই।
Bangladesh: Bangladesh awaits the unprecedented live ICT verdict on Sheikh Hasina for five counts of crimes against humanity; prosecution seeks death and confirms she forfeits appeal rights as a ‘fugitive’. Charges include ordering police firing, using advanced weapons, and being directly involved in the murder of 1,500 people during the 2024 July Movement.


